বাবার চিকিৎসার কথা বলে ফেসবুকে প্রতারণার বার্তা
খাটের ওপর শুয়ে আছে একজন বৃদ্ধ। সামনে বসা ছোট্ট একটি মেয়ে। হাতে কাগজ। দেখে মনে হবে মেয়েটি সাহায্যপ্রার্থী। এমনই একটি ছবি সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর ছবিটির সঙ্গে ইনবক্সে দেয়া হচ্ছে একটি মেসেজ, যাতে লেখা আছে, ‘ছবিটি সবাইকে সেন্ড করো। কারণ এ মেয়েটার বাবার অপারেশন হবে। এটি যতবার সেন্ড করা হবে মেয়ের পরিবারকে ততবারই ১ টাকা করে দেবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।’ এই মেসেজ পেয়ে বাংলাদেশের আবেগী অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের বন্ধুদের ইনবক্সে তা পাঠাতে শুরু করেন। অনেকে ম্যাসেঞ্জারেও পাঠাচ্ছেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে ফেসবুকে এটি ভাইরাল হয়েছে। অনেকে এই ছবি ও মেসেজটি তাদের ফেসবুক ওয়ালেও শেয়ার করছেন। এতে আবার কেউ কেউ বিরক্তিও দেখাচ্ছেন। তবে পোস্টটি নিছক ‘প্রতারণামূলক বার্তা’ উল্লেখ করে আইটি বিশেষজ্ঞ তানজিম আল ফাহিম বলেন, এ বার্তা পাঠানো কিংবা শেয়ারের জন্য ফেসবুক কাউকে কোনো টাকা দেবে না।“এ ধরনের পোস্টে অনেকেই বিরক্ত হন। তারা চাইলে শেয়ার দেয়া বা সেন্ড করা ওই ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ‘রিপোর্ট’ করতে পারেন। এতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ওই অ্যাকাউন্টধারীকে সতর্ক কিংবা তার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে অচল করে দিতে পারে“ বলেন তিনি।
পোস্টের বিষয়ে এরিনা ওয়েব সিকিউরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও সাইবার একাত্তরের অ্যাডমিন মো. ফাহিম বলেন, ফেসবুকের হোম পেজেই উল্লেখ করা আছে, ‘It’s free and always will be.’ অর্থাৎ ফেসবুক ব্যবহার কিংবা পরিচালনার জন্য আপনার কাছে কোনো অর্থ নেয়া হবে না। সুতরাং আপনার কমেন্ট/লাইক, শেয়ার কিংবা ইনবক্সে পাঠানো থেকে ফেসবুক কোনো আয় করে না। এর থেকে কোনো প্রকার অর্থও তারা কাউকে দেয় না। বিভিন্ন সময় দুর্যোগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ত্রাণ দিলেও সেটা কখনোই এসব কার্যক্রমের ভিত্তিতে নয়। তিনি বলেন, ওই ১ টাকা কিংবা ডলার যোগ হওয়ার সংবাদটি সম্পূর্ণ প্রতারণামূলক বার্তা, ইন্টারনেটের পরিভাষায় একে হোক্স (ধাপ্পাবাজি) বলে। গত কয়েক দিনে এ বার্তা ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছড়িয়ে পড়ছে। এর কোনো ভিত্তি নেই।ফাহিম আরও জানান, ২০০৭ সাল থেকে ফেসবুক ঘিরে এ ধরনের হোক্স চালু আছে। বিভিন্ন সময় তা পরিবর্তিত রূপে ফেসবুকে ছড়ায়। এ ধরনের লিংকে ক্লিক করে অন্যজনকে পাঠানোর মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক পরিচিতজনের কাছ থেকে এ বার্তা আসতে পারে। এ ধরনের বার্তা এলে তাতে ক্লিক না করে বা এ বার্তা অনুসরণ না করে তা ডিলিট করা বা মুছে দেয়ার অনুরোধও জানিয়েছে ফেসবুক।
কীভাবে ফেসবুক হোক্স থেকে সতর্ক হবেন?
ফাহিম জানান, হোক্স স্লেয়ার (Hoax Slayer) নামে একটি ওয়েবসাইট বিভিন্ন হোক্স পর্যবেক্ষণের কাজ করে। হোক্স সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করে। সাধারণভাবে কোনো পোস্ট শেয়ার করার আগে সন্দেহ হলে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে পরামর্শ (সাপোর্ট) চাইতে পারেন।এছাড়াও ফেসবুকে একটি প্রোগ্রাম রয়েছে ফ্যাক্ট চেকিং নামের। ‘ফেক নিউজ ফিল্টারিং টুল’থেকে শুরু করে ‘ফ্যাক্ট-চেক বাটন’অবধি বিভিন্ন নাম দেয়া হচ্ছে এটিকে। ফেসবুক ব্যবহারকারী যদি কোনো পোস্ট দেখে মনে করেন যে, এটা ফেক নিউজ হতে পারে তাহলে তারা পোস্টটির ওপরের ডানপাশের বাটনে ক্লিক করে সেটিকে ফেক নিউজ হিসেবে ফ্ল্যাগ করতে পারবেন। ফেসবুকের কর্মীরা তখন সেই পোস্টটিকে দেখবেন, সেই সঙ্গে সেটিকে পাঠানো হবে বার্লিনভিত্তিক একটি নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-চেকিং সংগঠনের কাছে, যার নাম ‘করেক্টিভ’। করেক্টিভ যদি পোস্টের কাহিনীটিকে অনির্ভরযোগ্য মনে করে তাহলে সেটিকে ‘ডিসপিউটেড’বা ‘বিতর্কিত’বলে ফ্ল্যাগ করা হবে৷ এছাড়া আরও কয়েকটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফেসবুককে সহায়তা করে থাকে।