ঢাকা: ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর শেষ করার একদিন পরেই বাংলাদেশে আসলেন চীনের বিশেষ দূত। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফর দ্বিপাক্ষিক হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে তা বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। এখন চীনের বিশেষ দূতের সফরটিও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গত ২২ অক্টোবর দুপুরে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সুষমার ঢাকা সফরের কয়েক দিন আগে ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারি একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে লেখা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব বাড়ছে। এ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা জনিত বিষয়ের জন্য বাংলাদেশের উপর ভারতের প্রভাব ধরে রাখা ছাড়া বিকল্প নেই। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের বিশেষ এক সম্পর্ক রয়েছে। যার ভিত্তি রচিত হয়েছে ১৯৭১ সালে। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগও ভারসাম্য আনতে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছে। আওয়ামী লীগের চীন যাওয়াটা ভালোচোখে দেখছে না ভারত। তাই হঠাৎ করেই এক মাসের ব্যবধানে দিল্লির আরেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ঢাকা সফর করবেন। এক মাস পূর্বেই ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে গিয়েছেন। স্বভাবতই সুষমার ঢাকা সফর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুষমার বৈঠকটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ওই বৈঠকে সুষমা বলেছিলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য দেখতে চায় ভারত। সুষমার সফরের আগেই ভারতের গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হয়, ভারতের কাছে মনে হয়েছে, সরকারি দল ও বিএনপি দুই দলই চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। যা ভারতকে উদ্বিগ্ন করেছে। এতে ধরে নেয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের উপর চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। এই প্রভাব কমাতেই দিল্লির বার্তা নিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন সুষমা স্বরাজ।

কূটনৈতিক অঙ্গনে তা বিশ্বাস করে নেয়ার যথেষ্ঠ যুক্তি সবার সামনে চলে আসে। এর আগেও একবার সম্ভ্যাব্য তারিখ করেও আসেননি সুষমা। মূলত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে সুষমার ঢাকায় আসার কথা। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি গত ২২ তারিখে বাংলাদেশে আসেন। তার সফরে উঠে আসে, আগামী নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যু ও বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা। যা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সরকারি দলেও নেতাদের মধ্যেও চলে কানা-ঘুষা। সুষমার সফরের রেশ না কাটতেই ঢাকায় এলেন মিয়ানমারের বিশেষ রাষ্ট্রদূত। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত সান গোশিয়াং সরাসরি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসেন বুধবার(২৫ অক্টোবর)। এর আগেও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশের মনোভাব জানতে সান গোশিয়াং গত এপ্রিলে চার দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন।

সফরে এসেই ঘোষণা দিলেন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যস্থতা করতে চায় চীন। এজন্য বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা প্রকাশ করলেও এবার প্রথম স্পষ্ট করে প্রস্তাব দিল। চীনের এমন প্রস্তাব বাংলাদেশের জনগণ ও রোহিঙ্গাদের কাছে ব্যপক জনপ্রিয়তা এনে দিবে দেশটিকে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও চীনের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা সফররত চীনের বিশেষ দূতের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে মধ্যস্ততা করতে চায় চীন। এজন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে চীনের পক্ষ থেকে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn