বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না চাষি, বিপাকে বোরো কৃষকরা
চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই সিলেটের হাওরগুলোতে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বোরো কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। ঐসব হাওরের পানি নিচের দিকে নামছে না বলেই অনেক স্থানে চাষিরা বোরো বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। কৃষকরা জানান, ব্রি-২৯ ধানের বীজতলা তৈরির আর সময় নেই। ব্রি-২৯ জাতের ধান পাকতেও সময় লাগে। তাই সময়মত রোপণ দিতে না পারায় এই জাতটির জন্য বন্যার ঝুঁকি থেকে যায়। বৈশাখে এই জাতের ধান পাকার আগেই ঢলের পানি আসতে পারে। কৃষকরা জানান, তবে ব্রি-২৮ জাত অগ্রহায়ণের ১৫ তারিখের মধ্যে বীজতলা তৈরি করে বপন দিতে পারলেও হয়তো ফলন পাওয়া যাবে। অবশ্য ব্রি-২৮ জাতের জাতের ধানের ফলন কম হয়। এদিকে সময়মত পানি না কমলে বোরো মৌসুম পিছিয়ে যেতে পারে। একইভাবে হাওর এলাকায় ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণেও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
গত কয়েকদিন সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে তাই দেখা যায়। গত বছর সিলেটে বোরোর বাম্পার ফলনের পরও কৃষকরা গোলায় ধান তুলতে পারেননি। ধান পাকার আগেই চৈত্রের শেষে সব ধান ভেসে যায় ঢল আর বৃষ্টির পানিতে। এবার মৌসুমের শুরুতে হাওরে পানি না কমায় কৃষককুল উদ্বিগ্ন। অনেক স্থানে কৃষকরা বীজ নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। সিলেটের কৃষকরা এখন হাওরের পানি কমার অপেক্ষায়। সিলেটের মৌলভীবাজারের বৃহৎ হাকালুকি হাওরের পারের বিভিন্ন গ্রামের দৃশ্য বর্ষাকালের মত। শসারকান্দি, বড়দল, ভূকশিমাইল, কুরবানপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের পাশে এখনো নৌকা চলে। বোরো প্রধান সুনামগঞ্জের মাঠিয়ান, আঙ্গুর আলী, মহালিয়া শমসা, ফানা কেচুয়া, বেড়ার ডহর, দেখার হাওরসহ অন্তত দু’ডজন হাওরে এখনও পানি থৈথৈ করছে। এদিকে এ বছর সিলেটের চার জেলায় বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার ৭৪১ হেক্টর। কিন্তু এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকী ভুঁইয়া জানিয়েছেন, গত রবিবার জেলার সুরমাসহ পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোতে ৫ দশমিক ৩ মিটারে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর পানির উচ্চতা অনেক বেশি থাকায় হাওরে পানি কমার গতি ধীর। তবে নদীর পানি প্রতিদিন ১০ সেন্টিমিটার করে কমছে বলে জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড। সারাদেশের খাদ্য চাহিদার একটি বিরাট অংশ মিটিয়ে থাকে সিলেট। সিলেটে বোরো উদ্বৃত্ত ফসল। তবে যদি প্রকৃতি সদয় না হয় তাহলে কৃষকের গোলা শূন্য থাকে। যা গত বছর হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সিলেটস্থ উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলতবুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, শেষ পর্যন্ত পানি কমে যাবে এবং আমরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাষাবাদ করতে সক্ষম হব।