ওয়েছ খছরু-

বিতর্কিত ঘটনায় মামলার আসামি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানাপ্রাপ্তদের নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন সিলেট আওয়ামী লীগ নেতারা। সম্প্রতি ভারতের শিলংয়ে সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ দুর্নীতির মামলার এক আসামি নিয়ে বেড়াতে গিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। যদিও গত শুক্রবার ওই আসামিকে শিলংয়ে রেখেই তিনি একা দেশে ফিরেছেন। এ ঘটনায় শুধু মিসবাহ উদ্দিন সিরাজই নয় সিলেট আওয়ামী লীগও বিব্রত। তবে মিসবাহ সিরাজের ঘনিষ্টজনরা দাবি করেছেন, মিসবাহ সিরাজকে ডাউকি ইমিগ্রেশনে পেয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলা হয়েছিল। পরে ওই ছবি ফেসবুকে দেয়া হয়। ফেইসবুকে একটি অনুষ্ঠানের ছবি দিয়ে বিতর্কিত করা হয় সিলেট মহানগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তাকেও। হাওরে বাঁধ নির্মাণসহ দুর্নীতির ঘটনায় সুনামগঞ্জ ও সিলেটের যেসব ঠিকাদার দুদকের মামলার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েছেন, তারা অনেকেই আওয়ামী লীগ দলীয়। তারা সামাজিকসহ নানা অনুষ্ঠানে অনেক সময় পলাতক থেকেও নেতাদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ছবি তুলছে আবার তা ফেসবুক ওয়ালে দিচ্ছে। এ কারণে সম্প্রতি সময়ে আলোচনায় এসেছেন সিলেটের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদও। গেলো সপ্তাহে ভারত সফরে যান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। একই দিনে ভারতে যান সুনামগঞ্জের হাওর দুর্নীতি মামলার আসামি আব্দুল হান্নান। দুজনই পরিবারপরিজন নিয়ে ভারত সফরে যান। এ সময় মিসবাহ সিরাজের সঙ্গে দেখা দেয় আব্দুল হান্নানের। আব্দুল হান্নান সিলেট যুবলীগের সিনিয়র নেতা। অনেক পরিচিত মুখ। ফেসবুকে একটি ছবিতে দেখা যায় আব্দুল হান্নানের সঙ্গে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও তার পরিবার ভারতের ডাউকী ইমিগ্রেশনে দাঁড়িয়ে আছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করা হয় ফেসবুকে। পলাতক আসামিদের সঙ্গে ফেসবুকে ছবিতে বিব্রত হন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তিনি ভারত অবস্থানকালেই বাংলাদেশে এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। প্রায় চার দিন ভারত সফর শেষে শুক্রবার মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ দেশে ফিরেন। তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি দেশে ফিরলেও আব্দুল হান্নান এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন। মিসবাহ সিরাজের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, হান্নানের সঙ্গে মিসবাহ সিরাজ ভারতে যাননি। ওখানে দেখা হওয়ায় হান্নান ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছবি ফেসবুকে দেখা যায়। তবে ছবিটি কোন সময়ের সে ব্যাপারে পরিষ্কার জানা যায়নি। এদিকে সিলেটের এমসি কলেজের শতবর্ষী ছাত্রাবাস জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির তালিকায় শীর্ষদের মধ্যে অন্যতম আসামি সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি পঙ্কজ পুরকায়স্থ। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে গতকাল সিলেটের ওসমানীনগরে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। ওই সমাবেশ ও মিছিলে অগ্রভাবে ছিলেন পঙ্কজ পুরকায়স্থ। সমাবেশে তিনি বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষ হতে না হতেই তার এই ছবিটিও ভাইরাল হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীও ছিলেন। তবে পঙ্কজ ঘটনার প্রায় ৫ বছর পর এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এর আগে সিআইডির দুই দফা ও পিবিআইয়ের এক দফা মামলার তদন্তে তার নাম আসেনি। বুধবার সিলেটের আদালতে দাখিল করা জুডিশিয়াল তদন্তে তার নাম উঠে আসে এবং আদালত পঙ্কজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও এখনো সেটি আদালত পুলিশের হাতে পৌঁছেনি বলে গতকাল জানা গেছে। আদালত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আসার পর সেটি সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হবে। এরপর পুলিশ অভিযান চালাবে। সুতরাং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো হাতে না পাওয়ায় সিলেট পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না। এজন্য পঙ্কজ পুরকায়স্থ এখনো দলীয় কর্মসূচিতে সরব রয়েছেন। এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় তদন্ত রিপোর্টে দোষী অনেকেই এখনো রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যস্ত রয়েছেন। সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আসামি কিংবা অভিযুক্তরা যাতে কোনোভাবেই দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পারে সে কারণে তারা সতর্ক রয়েছেন। কিন্তু অসতর্কতাবশত অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হয়ে যায়। তারা বলেন, যারা অভিযুক্ত তাদের বর্জন করা সবার জন্য মঙ্গল।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn