শফিক রেহমানকে দেখতে চান গাফফার চৌধুরী
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী-
সপ্তাহ দু’য়েক আগে লন্ডন থেকে ইটালীর ভেনিস গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় ষ্টেনস্টেড এয়ার পোর্টে বসে ফেসবুক দেখছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো বন্ধুবর দিলু নাসেরের ছবির সঙ্গে আব্দুল গাফফার চৌধুরী। দিলু নাসের লিখেছিলেন, গাফফার ভাই ভাল নেই। আমি লেখা পড়ে মনে মনে বলছিলাম, গাফফার ভাই সেরে উঠবেন’ ভাল হয়ে যাবেন”। ভেনিস থেকে এসে খোঁজ খবর নিলাম…. না তিনি এখনো হাসপাতালে। এইতো দু তিন আগে দিলু নাসের ফোন করলেন কুশল বিনিময়ের পর বললেন,” গাফফার ভাই ভাল নেই, তুমি একবার দেখে আসো। দিলু নাসেরের ভারী কন্ঠ শুনে মন টা খারাপ হয়ে গেল। জিজ্ঞাসা করলাম, আর কি কিছু বলেছে? দিলু নাসের বললেন, গাফফার ভাই সবার খবর জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি তেমন কোন খবর নেই। তবে ফয়সল চৌধুরী শোয়েব চ্যানেল আইতে শফিক রেহমান সাহেবের জন্মদিন পালন করেছে। তখন গাফফার ভাই জানতে চেয়েছেন, কতোতম জন্মবার্ষিকী? দিলু নাসের বলেছেন তা তো জানিনা। গাফফার ভাই মুচকি হেঁসেছে তারপর বন্ধুবর দিলু নাসের বললেন গাফফার ভাই শফিক রেহমান সাহেবের ফোন নাম্বার চেয়েছেন, তোমার কাছে থাকলে একটা ফোন করে বলে দাও.. গাফফার ভাই শফিক ভাইকে দেখতে চান।
আমি দিলু নাসের কে তালেয়া রেহমানের নাম্বার দিয়ে বলি, বন্ধু তুমি ফোন করে বলে দাও। আমার কাছে শফিক ভাই এর নাম্বার নেই।” দিলু নাসের ধন্যবাদ দিয়ে লাইন কেঁটে দেন। তারপর দুদিন কেঁটে গেল মধ্যে খানে সাবেক জাসদ নেতা ও বিশিষ্ট মুক্তি যোদ্ধা মাহমুদ হাসান ভাই ফোন করলেন বললেন, গাফফার ভাই কে নিয়ে বিপদে পড়েছেন, যারা হাসপাতালে দেখতে যাচ্ছেন, তারাই গিয়ে সেলফি তুলে ফেসবুকে দিচ্ছেন। তুমি চ্যানেল আইর স্ক্রলে লিখে দাও সেলফি পার্টি যেন হাস পাতালে গিয়ে বিরক্ত না করে। মাহমুদ হাসান ভাই কথা বললেন, কথা বললেন দেশ টিভি ইউকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন এবং গাফফার ভাইর মেয়ে বিনীতা চৌধুরী।
লোকমান ভাই বললেন,” কিছু অতি উৎসাহী লোক নাকি গাফফার ভাইর চিকিৎসার জন্য প্রধান মন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করছেন। মাহমুদ হাসান ভাই, লোকমান ভাই এবং বিনীতা চৌধুরী আমাকে অনুরোধ করে বলেন যে, গাফফার ভাইর চিকিৎসার জন্য কোন টাকা পয়সা লাগবেনা এবং তাঁর ছেলে-মেয়েরা এখনোও জীবিত, তারাই তাদের বাবার যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করতে সক্ষম। আমি পড়ে যাই বিপদে। গাফফার ভাই অসুস্থ এটা স্ক্রলে দেখা যায়, কিন্তু তার চিকিৎসার টাকা পয়সা যেন কেউ না আনে তা দিব কি করে?? আমি এই অংশ টুকুতে নিরব থাকি।সে যাক, আজ লোকমান ভাইর সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলি, লোকভান ভাই ও আমাকে বললেন,” তাঁকে দেখে আসার জন্য।” কি আর করা গাফফার ভাইর জন্য খুবই খারাপ লাগে। সারাটা জীবন তিঁনি বাঙালীর সেবা করে গেলেন, বাংলা ভাষার সেবা করে গেলেন আর আজ বিনিময়ে তিঁনি কি পেলেন??
গাফফার ভাই যে হাসপাতালে সেই হাসপাতাল পূর্ব লন্ডন থেকে অনেক দুর। লোকমান ভাই বললেন ট্রেনে করে চলে যান। না ট্রেনে যেতে পারিনি। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে আমি মিডিল সেক্সের একটি হাসপাতালে দেখতে গেলাম গাফফার ভাই কে। রাত ৯ দিকে যখন হাসপাতালে পৌছাঁলাম তখন ভিজিটিং টাইম শেষ। নার্সরা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, কিন্ত কোন কথা বলছেনা। হাসপাতালে গিয়ে দেখি গাফফার ভাই বেডে শুয়ে আছেন তাঁর পাশে তাঁর মেয়ে বিনীতা আর একজন অপরিচিতপুরুষ মানুষ। বিনীতা বিরক্ত। কারণ সারাক্ষণ ভিজিটররা যাচ্ছে আর আসছে….। বিনীতা পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম না কিছুই। গাফফার ভাই ঠিকই চিনতে পারলেন। ঈশারা করলেন, হাত তুললেন। ঔষধ সেবন করার সময় কাঁশি উঠে। আমি গাফফার ভাইর পিঁঠ মালিশ করতে থাকি। বিনীতা সারাক্ষণ বাবার পাশেই আছেন। সোমবার সারাদিন গাফফার ভাইর পাশে ছিলেন দেশ টিভির সাবেক ডিরেক্টর আজিজ ভাই। সন্ধ্যার দিকে বিনীতা আসলে আজিজ ভাই বাসায় চলে আসেন। আমি অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থেকে গাফফার ভাই কে দেখলাম। গাফফার ভাইর সঙ্গে আমার কতো রঙবেরঙের স্মৃতি…. কতো সোনালী দিনের রূপালী কথা….সে সব স্মৃতি আজ আর লিখতে ইচ্ছা করছেনা…..
বিঃ দ্রঃ গাফফার ভাই ভাল নেই। আসতে মনই চায়নি তবু আমাকে আসতে হলো। এক সময় আমি বিদায় নেই। গাফফার ভাই অপলক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি দরজার কাছে এসে আবার তাকাই….মনে মনে বলি ‘এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো। ” আমি জানিনা। হাসপাতালের নার্সরা ও মেয়ে বিনীতা সহ গাফফার ভাইর সেবা করছেন তার পরেও আমার কেন জানি মনে হলো ” গাফফার ভাইর পাশে সার্বক্ষনিক একজন মানুষ দরকার।
লেখক ব্যবস্থাপনা পরিচালক চ্যানেল আই ইউ কে।