শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চায় বিএনপি
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ চেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগ করা উচিত। তিনি শিক্ষামন্ত্রী পদে থাকার নৈতিক যোগ্যতা হারিয়েছেন।’ অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘নাহিদ সাহেব কতটা অনৈতিকতার পরিপূরক হয়েছেন তা তার সহনশীল মাত্রার ঘুষ তত্ত্বেই প্রমাণ হয়েছে। এ তত্ত্ব প্রকাশ করে তিনি শুধু নৈতিক অপরাধই করেননি, আইনগত অপরাধ করেছেন। তার ঘুষ তত্ত্বে অপরাধীদের উৎসাহ দেয়া হয়েছে। দায়িত্বশীল পদ থেকে এ ধরনের অশালীন, অসংলগ্ন কথা বার্তা কেউ প্রত্যাশা করে না। তাই আমি বলবো, আপনি পদত্যাগ করুন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আগুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে না পেরে পোড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের পাশে গিয়ে চোখের পানি ফেলেছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি এতটাই অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন যে শিক্ষকরাও তার ওপর আস্থা রাখছে না। ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে একে একে ধ্বংস করে চলেছে। সবচেয়ে বেশি নৈরাজ্য চলছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। প্রশ্নপত্র ফাঁস থেকে শুরু করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ধ্বংস করার জন্য কোন প্রচেষ্টা বাকি রাখা হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি তো দূরের কথা শিক্ষার মান নিম্নগামীসহ শিক্ষার সব ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বর্তমান সরকার। এ সরকারের আমলে বাংলাদেশের প্রায় সব পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। চাকরির পরীক্ষা থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষাই বাদ নেই যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁস নাই।’ বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘নভেম্বর-ডিসেম্বর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার মৌসুম। বার্ষিক পরীক্ষায় ১ম শ্রেণির প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার কারণে পরীক্ষা স্থগিত করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাইরে, পরীক্ষা দিচ্ছেন অভিভাবকরা। দেশের বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমসহ সব মাধ্যমে এ সব খবরে নিন্দার ঝড় উঠেছে।’অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সম্প্রতি খবর বেরিয়েছে যে, সরকারি স্কুলে চলন্ত সিড়ি ব্যয় ১১শ’ কোটি টাকা। সরকারের কোনো স্তরের লোকদের মাথা থেকে সরকারি স্কুলে চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে ১১শ’ কোটি খরচ করতে হবে তা বোধগম্য নয়। এটা যে চুরির প্রকল্প তাতে কোনো সন্দেহ নাই। শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারের দুর্নীতির আরও খবর পত্রিকায় এসেছে। নিম্নমানে কালি-কাগজে বই ছাপানো হয়েছে। বই বিতরণে ভয়বাহ পরিস্থিতি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন থেকে প্রকাশনা পর্যন্ত এনসিটিবি’র কাজের ধরণ, পান্ডুলিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়া, লেখা নির্বাচন ও শব্দ চয়ন, বিষয় বিশেষজ্ঞ নিয়োগ-নব ক্ষেত্রে অনিয়ম ও গাফিলতির তথ্য প্রকাশ করেছে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশনা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত লোকজন বিভিন্ন পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা নেয়া, নিজস্ব প্রকাশনার মাধ্যমে বই মুদ্রণ, অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দেয়াসহ নানা উপায়ে দুর্নীতি হচ্ছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এনসিটিবি এখনও সম্পূর্ণ কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি। এটি স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিমালা নেই। এ সরকার ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ভিন্নমতাবলম্বী শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্রদের অমানবিক নির্যাতন করা হয় প্রায় প্রকাশ্যেই বিরোধী দলশূন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের বন্দুকযুদ্ধ নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক এ নেতা বলেন, ‘শিক্ষকদের ওপর ন্যাক্কারজক হামলা যেন সবার গা সহা হয়ে গিয়েছে। সরকারদলীয় মতাদর্শের শিক্ষকরাও রেহাই পাননি এ ধরনের হামলা থেকে। সামান্য কারণে, তুচ্ছ অজুহাতে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীকে। দলীয়করণের এ অবস্থা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। আমরা মনে করি দেশকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই অনতিবিলম্বে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।