অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহিত্যের অন্বেষণকে মানবিক মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং যৌক্তিকতাবোধকে শাণিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত থেকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য কবি-সাহিত্যিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার বিকেলে রাজধানীর ওসামানী স্মৃতি মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন ১৪২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশ অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত এই সাহিত্য সম্মেলনের যৌথ আয়োজক বাংলা একাডেমি, নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য কেন্দ্র এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ। বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এই সম্মেলনে ভারত, জাপান ও জার্মানি থেকে আগত প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে আজ এক অস্থিরতা বিরাজ করছে। সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য গ্রাস করে নিতে চাচ্ছে সকল শুভবোধকে। এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে হবে। আর এ জন্য সাহিত্যচর্চার কোনো বিকল্প নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভ্যতা বিকশিত হয়েছে মানুষের সৃজনশক্তিতে। আর এই সৃজনশীলতার বাহন হচ্ছে ভাষা। তাই সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশে সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। সাহিত্যচর্চা মানুষের মধ্যে শুভবোধের বিকাশ ঘটায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের অমিত সম্ভাবনার দ্বারকে উন্মোচিত করে। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে লড়তে শেখায়। যে সমাজের সাহিত্য যত ঋদ্ধ, সেই সমাজ তত বেশি সভ্য। আমাদের বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিও অনেক সুদৃঢ়। আর সে কারণেই বাংলা ভাষা আজ বিশ্বের অন্যতম মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।’ ‘বিশ্বমানব হবি যদি কায়মনে বাঙালি হ’ গুরুসদয় দত্তের এই অমিয় বাণীকে ধারণ করে আয়োজিত হচ্ছে এবারের আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলন। শেখ হাসিনা সম্মেলনের এই মূল প্রতিপাদ্যের উল্লেখ করে বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সব বাঙালির মনে রাখতে হবে, আমাদের শেকড় হচ্ছে বাংলা। এই বাংলাভাষাকে ভিত্তি করেই আমাদের স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আয়োজন একদিকে নতুন সম্ভাবনাকে উন্মোচিত করবে, অন্যদিকে নিজেদের সামর্থ্যকে তুলে ধরবে । জনগণই সব সাহিত্য ও শিল্পের উৎস- নিজের এমন বিশ্বাসের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোনদিন কোন মহৎ সাহিত্য বা উন্নত শিল্পকর্ম সৃষ্টি হতে পারে না। আমি সারাজীবন জনগণকে সাথে নিয়ে সংগ্রাম করেছি, এখনো করছি। ভবিষ্যতে যা কিছু করব জনগণকে নিয়েই করব।’ তিনি এরপর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। সম্মেলন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, নিখিল ভারত বঙ্গসাহিত্য সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত ঘোষ, সহ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি সত্যম রায় চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কবি শামসুর রাহমানের একটি কবিতা আবৃত্তি করেন এবং আয়োজক কমিটির প্রধান সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু স্বাগত বক্তৃতা করেন।