আবার অবসরে যাবার ঘোষোনা দিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত
জন্মদিনের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষের কাছেই এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমার কাছেও। আর অনুভূতির কথা বলতে গেলে এক বাক্যে বলতে পারি অভূতপূর্ব। পরম করুণাময় আল্লাহতালার অশেষ কৃপায় আমি এখনো কর্মক্ষম আছি এর চেয়ে বড় পাওয়ার আর কী থাকতে পারে। পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আবদুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। মুহিত ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি) যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনা সচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন। তিনি পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপসচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ, যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন। ১৯৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে আসেন। আসার আগেই তার নিয়োগ হয়েছিল পরিকল্পনা সচিব হিসেবে। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনে চলে যান। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর বাংলাদেশ মিশন হয়ে যায় বাংলাদেশ দূতাবাস। মুহিত সেখানে অর্থনৈতিক মিনিস্টার থাকেন দুই বছরের মতো। ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সদস্য হলে সেপ্টেম্বরে মুহিত হন বিশ্বব্যাংকে বাংলাদেশের পক্ষে ভারত-বাংলাদেশ-শ্রীলংকা গ্রুপের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক। ১৯৭৪-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৭ সালের মে পর্যন্ত মুহিত ছিলেন ম্যানিলায় অবস্থিত এডিবিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পক্ষে এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর। ১৯৭৭-’৮১ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সালের ৮ জানুয়ারির মধ্যে দুটি বাজেট পেশ করেন। পরে তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন। লেখক হিসেবেও আবুল মাল আবদুল মুহিত সমান পারদর্শী। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ৩৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে সরকার। বর্তমান সরকারের গত ও চলতি মেয়াদ মিলে এ পর্যন্ত ৯টি বাজেট প্রণয়ন করেন তিনি। আগামী জুনে এ সরকারের শেষ বাজেটও দেওয়ার কথা তারই। এর আগে এরশাদ আমলে দুটি বাজেট দেন তিনি।