সিলেটে খালেদাকে ঘিরে জনতার ঢল
খালেদা জিয়া আসবেন বিকেলে। অথচ সকাল থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চন্ডিপুলে জড়ো হয়েছেন বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। সময় সময় বাড়ছে এ ভিড়। দুপুরের পর থেকে তো হযরত শাহজালাল (র.) মাজার প্রাঙ্গণে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সন্ধ্যায় তিনি যখন ওই মাজারে যান তখন নেতাকর্মীদের ভিড় ঠেলে তাকে মাজারের এবাদতখানায় নিয়ে যেতেই বেগ পেতে হয়। একই ধরণের ভিড় ছিলো সার্কিট হাউস আর হযরত শাহপরান (র.) মাজার প্রাঙ্গনেও। আর নগরীর সবকটি সড়ক তো সোমবার ছিলো মিছিলে মিছিলে সয়লাব। খালেদা জিয়ার সিলেট সফরে সোমবার এমন জনতার ঢল নামে সিলেটে। ভোটের বছরের শুরুতে দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগে সিলেটে এসে হযরত শাহজালাল (র.) ও হযরত শাহপরান (র.) এর মাজার জিয়ারত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সোমবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিকালে সিলেট সার্কিট হাউজে পৌঁছান খালেদা। সেখানে জেলা বিএনপির নেতারা তাকে স্বাগত জানান। সন্ধ্যায় সিলেট নগরের দরগা মহল্লায় শাহজালালের মাজার জিয়ারত করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। হাজার হাজার মানুষের স্রোত ডিঙিয়ে শাহজালালের মাজারে নারীদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে তিনি মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। এরপর ফাতেহা পাঠ করে কিছুক্ষণ মোনাজাত করেন।
খালেদা জিয়া এরপর যান নগর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে খাদিমনগরে শাহপরানের মাজারে। সেখানে তিনি ফাতেহা পাঠ করে মাজার জিয়ারত করেন। পরে আবার ফিরে সার্কিট হাউসে। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম শেষে রাত ১০টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। প্রায় ছয়ঘন্টা সিলেটে ছিলেন খালেদা জিয়া। পুরোটা সময়ই অসংখ্য নেতাকর্মী ঘিরে ছিলেন বিএনপি নেত্রীকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওপর, বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব উন নবী খান সোহেল মাজার জিয়ারতের সময় উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়া দুই মাজারে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দলের নেতাকর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানান। জিয়ার এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় সামনে রেখে নেতাকর্মীদের ভিড় থেকে এ সময় স্লোগান দেওয়া হয়- ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি হতে দেব না’, ‘খালেদা জিয়া এসেছে রাজপথ কেঁপেছে’। বিএনপি চেয়ারপারসন বিকালে সড়ক পথে সিলেট সার্কিট হাউজে পৌঁছালে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মোক্তাদির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসেইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, জেলা সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা কলিমউদ্দিন মিলন, দিলদার হোসেন সেলিম, জিকে গউস, এম নাসের রহমান, কাইয়ুম চৌধুরী দলীয় চেয়ারপারসনকে অভ্যর্থনা জানান। খালেদা জিয়া এর আগে শেষবার সিলেটে গিয়েছিলেন দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ৪ অক্টোবর। সে সময় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ২০ দলীয় জোটের জনসভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন, যদিও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বিএনপি বর্জন করে।পাঁচ বছর পর তার এবারের সফরে জনসভার মত কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি রাখা হয়নি। জিয়ারত শেষে রাতেই ঢাকা ফেরেন তিনি।
গত ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সিলেটে গিয়ে মাজার জিয়ারত করে জনসভায় যোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রাকনির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে শেখ হাসিনার জনসভায়ও জনতার ঢল নেমেছিলো। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সকালে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার এই সফর শুধুই জিয়ারতের উদ্দেশ্যে, নির্বাচনী প্রচারের জন্য নয়। “এক বছর আগে নির্বাচনী প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। যেখানে এখন পর্যন্ত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি করা হয়নি, সেখানে নির্বাচনী প্রচার কীভাবে হবে?” ক্ষমতাসীন দল ও তাদের শরিকরা সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি না করে ‘এককভাবে’ নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে খালেদা জিয়ার যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।