ফয়জুরের কথাবার্তা অসংলগ্ন অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনার কিনারা হচ্ছে না। দিন যতই যাচ্ছে নানা প্রশ্ন আরো তীব্র হচ্ছে। তাকে ঘিরেই চলছে তদন্ত। পরিবারকেন্দ্রিক তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরিবার থেকে তেমন কোনো তথ্য পাননি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় কোনো চক্র তার সঙ্গে আছে কী না- সেটি এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ইন্টারনেট দুনিয়ায় তার সম্পৃক্ততার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখনো পুরোপুরি মুখ খুলেনি হামলাকারী ফয়জুর রহমান ফয়জুর। গতকালও পুলিশের একাধিক দল তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তার কথাবার্তা অনেকটা অসংলগ্ন। কৌশলে বিভিন্ন প্রশ্নে উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছে সে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে- ইন্টারনেট দুনিয়ায় বেশ দক্ষ ফয়জুর। তার নামের ফেসবুক আইডি আছে। কিন্তু সেখানেও নাম ভিন্নভাবে লিখা। পিতার নাম যুক্ত করে দেয়া হয়েছে সেখানে। এমডি আতিকুর বিন নজরুল নামে ছিল তার ওই ফেসবুক আইডি। এই ফেসবুক আইডির ফলোয়ার যারা তারা জেহাদি বিভিন্ন গোষ্ঠী। ওইসব গোষ্ঠীর সঙ্গে সে চ্যাট করেছে কী না- এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। ওই আইডিতে কেবল ফয়জুরের পারিবারিক একটি ছবি আছে। আর কিছু নেই সেখানে। ফয়জুরকে নিয়ে ধাঁধা আরও দানা বাঁধছে। কোনো সূত্র মিলছে না। মুখ খুলছে না সে, আবার যা কিছু পাওয়া যাচ্ছে সবই রহস্যময়। তবে, হতাশ নয় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি চৌকস দল সিলেটে অবস্থান করছে। তারা ফয়জুরকেন্দ্রিক সব দিকই তলিয়ে দেখছেন।
মঙ্গলবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে পাহারাদার খালেকুজ্জামানকে আটক করে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দল। রাতে ক্যাম্পাসের বাইরের এলাকা থেকে জাহিদুল ইসলাম নামের এক মোটর মেকানিককে আটক করা হয়। গতকাল পর্যন্ত এই দুই জনকে সিলেটের জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হয়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন।
পাহারাদার খালেকুজ্জামানের বাড়ি ফয়জুরদের গ্রামের বাড়ি দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। ফলে তাকে নিয়ে আরো সন্দেহ বেশি। সিলেটের জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুর রহমান জানিয়েছেন- পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করছেন। অন্য কোনো সংস্থা থেকে তাদের কাছে গতকাল কোনো আসামি দেয়া হয়নি। ঘটনার দিন আটক করা ফয়জুরের মামা ফয়জুল ইসলাম ও পরদিন আটক করা ফয়জুরের পিতা হাফিজ আতিকুর রহমান ও মা আমেনা বেগম তাদের হেফাজতে রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ওসি। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে জঙ্গি অস্তিত্ব রয়েছে বলে অনেক আগে থেকেই খবর এসেছে। এর মধ্যে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের ১১ সদস্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে পুলিশের অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- যদি ক্যাম্পাসে জঙ্গি থাকে তবে তিনি ক্যাম্পাসকে জঙ্গিমুক্ত করবেন। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। গতকাল ভিসি জানিয়েছেন- প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে ইতিমধ্যে দাবি করা হচ্ছে। সেটি সত্য হয়ে থাকলে পুলিশ প্রশাসনকেই তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মামলার তদন্ত কাজ শেষ করার জন্য তদন্ত সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন- সাধারণত হামলার ঘটনার পর একটি গোষ্ঠী ঘটনার দায় স্বীকার করে। তারা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে এসব ম্যাসেজ দেয়। তবে- জাফর ইকবালের ঘটনায় সেটি ঘটেনি। আবার আইটি বিষয়ে অনেক দক্ষ ফয়জুর রহমান। এ ছাড়া ঘটনার দিন তার সঙ্গে মোবাইল ফোনও ছিল না। তিনি জানান- তাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন এখনো বিদ্যমান। নিজ থেকে জঙ্গি কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এত বড় ঘটনা ঘটাতে পারে সেটি এখনো পুরোপুরি বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। তদন্তের সব সূত্র এক হলে সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে। ওসমানী হাসপাতালের ২৭ নম্বর কেবিনে রয়েছে ফয়জুর রহমান। সেখানে পুলিশ ও র্যাব পাহারায় তাকে রাখা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার গোলাম কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- ফয়জুর সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এখন তদন্ত চলছে। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সূত্র : মানবজমিন