মাহমুদুল হাসান, গাজীপুর।।

দেশে ১৭টি জঙ্গি হামলার মূল হোতা ও নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীর (হুজি) অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানের সঙ্গে তার পরিবারের কোনো সদস্য গত প্রায় আড়াই বছরে একবারও দেখা করতে আসেনি কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে।

মুফতি হান্নানের সঙ্গে তার পরিবারের কেউ দেখা করতে না আসার কারণ কি? অভিমান- নাকি ক্ষোভ-এ প্রসঙ্গে অবশ্য কিছু বলতে পারেনি জেল কর্তৃপক্ষ। তবে স্ত্রী ছেলে মেয়ে কিংবা কোনো স্বজন কারাগারে আসলে দেখা করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ফাঁসির দঁড়ির অতি কাছে থাকা মুফতি হান্নান।

গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে মুফতি হান্নানকে এই কারাগারের আনার পর থেকে আজ পর্যন্ত পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা তার কোনো স্বজন একবারের জন্যও দেখা করতে আসেননি। তবে তার ইচ্ছা হলো যদি তার ছেলে মেয়েরা আসে তাহলে তিনি দেখা করবেন।

তিনি বলেন, মুফতি হান্নান কখনো সিলেট কখনো আবার ঢাকা ছিলেন, সে সময় পরিবারের কেউ দেখা করেছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। ২০১৪ সালের শেষের দিকে মুফতি হান্নানকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তবে মাঝে দু’এক মাস তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেও রাখা হয় বলে জানান সিনিয়র এই জেল সুপার।

কারাগারের অন্য একটি সূত্র জানায়, মাঝে মাঝে হাজিরা দেওয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন আদালতে নেওয়া হতো। সে সময় হয়তো পরিবারের সদস্যরা দেখা করেন বলে জেলখানায় এসে আর দেখা করার প্রয়োজন মনে করেনি। সূত্রটি জানায়, মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত জঙ্গি নেতা শরীফ শাহেদুল বিপুলের সঙ্গেও তার পরিবারের কোনো সদস্য কিংবা কোন স্বজন একবারের জন্য দেখা করতে আসেননি।

জানা যায়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ এলাকার গ্রামের বাড়িতে মুফতি আবদুল হান্নানের মা রাবেয়া বেগম ও স্ত্রী রুমা বেগম বসবাস করছেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। রুমা বেগম ২ মেয়ে নিয়ে গ্রামের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তারা গ্রামের মহিলা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে যশোর কলেজের ছাত্র। ছোট ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় পড়ছে।

উল্লেখ্য, হুজি নেতা মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনের মৃত্যু পরোয়ানা সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে বুধবার (২২ মার্চ) বিকালে সিলেট জেলা কারাগারে কারাগারে পাঠানো হয়। এ কারাগারে শুধু দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপন থাকায় তাকে পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়। এবং মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল গাজীপুরে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকায় তাদের পরোয়ানা বুধবার সন্ধ্যায় সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

আপিল বিভাগের রায় হওয়ার পর এর আগেও কারাগারে তাদের মৃত্যু পরোয়ানা পাঠানো হয়েছিল। এরপর রিভিউ আবেদন করায় এবং তা খারিজ হওয়ায় আবার মৃত্যু পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে বলে সিলেট জেলা কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. ছগির মিয়া সাংবাদিকদের জানান।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির রায়ের রিভিউ খারিজের রায়ের অনুলিপি কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছালে বুধবার সকাল ১০টার দিকে তা দুই আসামিকে পড়ে শোনানো হয়।

উল্লেখ্য, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ (হুজি-বি) নেতা মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে ঢাকা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনায় ১৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার ওপর গ্রেনেড হামলা, ২০০০ সালে ২২ জুলাই কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলা, ২০০৪ সালের ২১ মে ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হলে ওই ঘটনায় তিন জন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৭০ জন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের বিচারিক আদালত হুজি প্রধান মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদ- এবং হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। আসামিপক্ষ এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের করা আপিল খারিজ হয়ে যায়। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। ১৯ মার্চ এ আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে চূড়ান্ত বিচারেও ফাঁসির রায় বহাল থাকে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn