বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণের প্রস্তুতির
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আটকে আছে বহুল প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এখনও রাজি করাতে পারেনি ‘ক্যারিশম্যাটিক’ মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর কিংবা ঢাকায় দেশটির উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির সফর হলেই ঝুলে থাকা তিস্তার অগ্রগতির আশা করে বাংলাদেশ। কিন্তু না এখনও কাঙিক্ষত অগ্রগতির কোনো তথ্য পায়নি সেগুনবাগিচা। এ অবস্থার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ সফরের প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। আগামী ২৫শে মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবনে’র উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও প্রধানমন্ত্রীকে বরণের প্রস্তুতির খবর দিয়েছে। ওই আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও উপস্থিত থাকছেন। তবে রাজ্য সরকারের তরফে এরই মধ্যে বিবিসিকে পরিষ্কার জানানো হয়েছে- শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দেখা হলেও তিস্তা চুক্তি নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ওই আয়োজনের পরদিন পশ্চিমবঙ্গে কবি নজরুলের নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। গত বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ ভারত সফর করেন। সেটি ছিল দিল্লিতে পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় সফর। সেই সফরে প্রতিরক্ষা খাতে পারস্পরিক সহায়তাসহ ৩৬টি দলিল সই হয়েছিল। সেই সময়ে তিস্তা চুক্তিটি সই হয়নি বা এ নিয়ে কোনো অগ্রগতির খবর দিতে পারেনি মোদি সরকার। এ নিয়ে বিএনপির তরফে দেশে কড়া সমালোচনা ছিল। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে সেই সমলোচনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিএনপির সমালোচনার জবাবে তিনি তৃপ্তি নিয়ে ফিরেছেন বলে জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কথাটি ছিল এরকম- ‘সম্মানের দিক থেকে আমরা সমান-সমান, এটা তৃপ্তির। এখানে হতাশার কিছু নেই। এই সফর সম্পূর্ণ সফল হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে তিনি দেশের স্বার্থহানি ঘটিয়ে কিছু কখনও করবেন না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেছিলেন- আমি তো কিছু চাইতে যাইনি, বন্ধুত্ব চাইতে গিয়েছিলাম, বন্ধুত্ব পেয়েছি।’
বিবিসির বিশ্লেষণ: প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট করেছে বিবিসি বাংলা। নির্বাচনী বছরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন ভারত যাচ্ছেন? শিরোনামে প্রকাশিত ওই রিপোর্টের সূচনাতে বলা হয়েছে- মাত্র বছরখানেকের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এ মাসের শেষের দিকে ভারত সফরে যাচ্ছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান রয়েছে। একটি উদ্বোধন, অন্যটি সম্মানজনক ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ। সেখানে তার সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দেখা হওয়ারও সম্ভাবনা আছে, যদিও রাজ্য সরকার বিবিসিকে পরিষ্কার জানিয়েছে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই পটভূমিতে কেন আবার এত কম সময়ের ব্যবধানে শেখ হাসিনার এই ভারত সফর ? এমন প্রশ্ন রেখে বিবিসি বলছে- আসলে লন্ডনে গত মাসে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে যখন নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার দেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ভারত সফরের ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছিল তখনই। সেই অনুযায়ী ২৫শে মে নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতেই শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন। পরদিন আসানসোলের কাছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেবেন সাম্মানিক ডিগ্রি। যে পশ্চিমবঙ্গের বাধাতে তিস্তা চুক্তি আটকে আছে, সেই রাজ্যেই তার এই সফরে অবশ্য তিস্তার ছায়া তেমন পড়বে না বলেই বিশ্বাস করেন ঢাকায় দায়িত্বপালনকারী সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী। তার মূল্যায়ন ছিল এরকম- আমার মনে হয় তিস্তা ইস্যু এখন অনেক ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে গেছে। মি. চক্রবর্তীর আরো ধারণা, ‘ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বলেই শেখ হাসিনা এই সফরে সম্মতি দিয়েছেন। তা ছাড়া, এই সফর প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও তার আরো এক দফা আলোচনার সুযোগ করে দেবে।’ কবি নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ার কাছে অবস্থিত যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে ডিগ্রি দিয়ে সম্মান জানাচ্ছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারেরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেখানকার অধ্যাপক অশিস মিস্ত্রি বলছিলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার সফর প্রথাগত কূটনীতির বাইরেও সম্পর্কের অন্য একটা দিগন্ত দিতে পারে। তার কথায় প্রটোকলের কূটনীতির বাইরেও পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির যে একটা পরিসর আছে, কিংবা ট্র্যাক-টু ট্র্যাক-থ্রি যাই বলুন না কেন, সেই দিক থেকে কিন্তু আমাদের এখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সফর আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যে তিস্তার মতো ইস্যুর এখনও মীমাংসা হয়নি, এই ধরনের ইনফর্মাল সফর- যেখানে দুই দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়- সেখানেই বরফ গলার প্রক্রিয়াটা শুরু হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী। তার মতে, দু’দেশের সম্পর্কটা যে শুধু ঢাকা-নতুন দিল্লির মধ্যেই সীমিত নয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গেরও বড় ভূমিকা আছে, তা তো অতীতে বারে বারেই দেখা গেছে। বস্তুত বিশ্বভারতী বা আসানসোলে মমতা ব্যানার্জি ও শেখ হাসিনার মধ্যে একান্ত আলোচনা হতে পারে, সেই সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির ক্যাবিনেটে সেচমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি বিবিসিকে পরিষ্কার জানাচ্ছেন, তিস্তার এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে জল ভাগাভাগির চুক্তি করার কোনো অবস্থাই নেই। মি. ব্যানার্জি বলছিলেন- এই শুখা মরসুমে তিস্তায় জল নেই বললেই চলে। উজানে যেভাবে সিকিম তিস্তার ওপর একের পর এক বাঁধ দিয়েছে তাতে এককালের ভরা নদী তিস্তা এখন একেবারে শুকিয়ে গেছে, আমাদের চাষের প্রয়োজনই মিটছে না। আমরা মনে করি তিস্তায় জলের প্রবাহ না বাড়িয়ে যদি চুক্তি করা হয় তাহলে তা কারোরই কাজে আসবে না, কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারবে না। ফলে এখন চুক্তি করাটাই তো অর্থহীন। ফলে বাংলাদেশে নির্বাচনী বছরে শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত সফর তিস্তা নিয়ে জট খুলতে পারবে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বিবিসির বিশ্লেষণ: প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট করেছে বিবিসি বাংলা। নির্বাচনী বছরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন ভারত যাচ্ছেন? শিরোনামে প্রকাশিত ওই রিপোর্টের সূচনাতে বলা হয়েছে- মাত্র বছরখানেকের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এ মাসের শেষের দিকে ভারত সফরে যাচ্ছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান রয়েছে। একটি উদ্বোধন, অন্যটি সম্মানজনক ডিলিট ডিগ্রি গ্রহণ। সেখানে তার সঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দেখা হওয়ারও সম্ভাবনা আছে, যদিও রাজ্য সরকার বিবিসিকে পরিষ্কার জানিয়েছে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই পটভূমিতে কেন আবার এত কম সময়ের ব্যবধানে শেখ হাসিনার এই ভারত সফর ? এমন প্রশ্ন রেখে বিবিসি বলছে- আসলে লন্ডনে গত মাসে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে যখন নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার দেখা হয়েছিল, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই ভারত সফরের ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়ে গিয়েছিল তখনই। সেই অনুযায়ী ২৫শে মে নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতেই শেখ হাসিনা বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করবেন। পরদিন আসানসোলের কাছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেবেন সাম্মানিক ডিগ্রি। যে পশ্চিমবঙ্গের বাধাতে তিস্তা চুক্তি আটকে আছে, সেই রাজ্যেই তার এই সফরে অবশ্য তিস্তার ছায়া তেমন পড়বে না বলেই বিশ্বাস করেন ঢাকায় দায়িত্বপালনকারী সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী। তার মূল্যায়ন ছিল এরকম- আমার মনে হয় তিস্তা ইস্যু এখন অনেক ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে গেছে। মি. চক্রবর্তীর আরো ধারণা, ‘ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বলেই শেখ হাসিনা এই সফরে সম্মতি দিয়েছেন। তা ছাড়া, এই সফর প্রধানমন্ত্রী মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও তার আরো এক দফা আলোচনার সুযোগ করে দেবে।’ কবি নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়ার কাছে অবস্থিত যে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শেখ হাসিনাকে ডিগ্রি দিয়ে সম্মান জানাচ্ছে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারেরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেখানকার অধ্যাপক অশিস মিস্ত্রি বলছিলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার সফর প্রথাগত কূটনীতির বাইরেও সম্পর্কের অন্য একটা দিগন্ত দিতে পারে। তার কথায় প্রটোকলের কূটনীতির বাইরেও পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির যে একটা পরিসর আছে, কিংবা ট্র্যাক-টু ট্র্যাক-থ্রি যাই বলুন না কেন, সেই দিক থেকে কিন্তু আমাদের এখানে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সফর আলাদা গুরুত্ব বহন করছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যে তিস্তার মতো ইস্যুর এখনও মীমাংসা হয়নি, এই ধরনের ইনফর্মাল সফর- যেখানে দুই দেশের মানুষের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়- সেখানেই বরফ গলার প্রক্রিয়াটা শুরু হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী। তার মতে, দু’দেশের সম্পর্কটা যে শুধু ঢাকা-নতুন দিল্লির মধ্যেই সীমিত নয়, সেখানে পশ্চিমবঙ্গেরও বড় ভূমিকা আছে, তা তো অতীতে বারে বারেই দেখা গেছে। বস্তুত বিশ্বভারতী বা আসানসোলে মমতা ব্যানার্জি ও শেখ হাসিনার মধ্যে একান্ত আলোচনা হতে পারে, সেই সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির ক্যাবিনেটে সেচমন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি বিবিসিকে পরিষ্কার জানাচ্ছেন, তিস্তার এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে জল ভাগাভাগির চুক্তি করার কোনো অবস্থাই নেই। মি. ব্যানার্জি বলছিলেন- এই শুখা মরসুমে তিস্তায় জল নেই বললেই চলে। উজানে যেভাবে সিকিম তিস্তার ওপর একের পর এক বাঁধ দিয়েছে তাতে এককালের ভরা নদী তিস্তা এখন একেবারে শুকিয়ে গেছে, আমাদের চাষের প্রয়োজনই মিটছে না। আমরা মনে করি তিস্তায় জলের প্রবাহ না বাড়িয়ে যদি চুক্তি করা হয় তাহলে তা কারোরই কাজে আসবে না, কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারবে না। ফলে এখন চুক্তি করাটাই তো অর্থহীন। ফলে বাংলাদেশে নির্বাচনী বছরে শেখ হাসিনার এই পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারত সফর তিস্তা নিয়ে জট খুলতে পারবে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।