ফাহমিদা নবী-তোমরা যে বলো, ‘দিবসও রজনী ভালোবাসা, ভালোবাসা, ভালোবাসা কারে কয়?’ ভালোবাসা কি পাখির বাসা? নাকি ফুলের মতো প্রজাপতির হাসি? ভালো তো বাসে মানুষ নিজের জন্যই। নিজেকে ভালোবেসেই মানুষ অন্যকে আপন করে নেয়। অন্যের জন্যই শুধুই ভালোবেসে যেতে পারে না। প্রকৃতির নিয়মেই তার ক্ষয় হয়, পূর্ণ হয়। তাই নিজের জন্যই কিছু শূন্যতা থাকা মানেই জীবন ও ভালোবাসা চলছে জীবনের নিয়মেই। সে নিয়মটাই শাশ্বত।তাহলে পরিপূর্ণতার ভালোবাসা আবার কী? মানুষ মাত্রই ভালোবাসতে পারে সাবলীলতায়। সাবলীল ভালোবাসার গভীরতা মানুষকে স্রোতের মতো টেনে নিয়ে যায় বহু বহুদূর। সেই দূরটা কত দূর বা কতটুকু তার অকৃত্রিম টান? অনেক দূর কিন্তু সে টানটা ছুটে গেলে মানুষ তার সাবলীলতা হারিয়ে ফেলে!হারিয়ে গেলে আড়াল হয়ে যায় সুখের চলন, বলন, ধরন। তাইতো সে সম্পর্কে আজও মানুষের মনে অজানা একটা রহস্যময়তার উত্তর জানার ঘোড়দৌড় রয়েই গেছে। ভালোবাসার গভীরতার ব্যাপকতা কখনও মন ভোলানো, কখনও বা একেবারে ছঁকে বাঁধা দায়িত্বের মতো, তাই না? সেখানে সাবলীল ব্যাপারটা সবচেয়ে আপসহীন ব্যাখ্যা চায়। আর এই ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে কেউ বেদনায় থাকে, কেউ অবুঝ কেউবা ভালোবাসায় মগ্ন, কেউবা অংশবিশেষেই রয়ে যায়। তাই তো কবি গুরুর গেয়ে ওঠেন, ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’ কিংবা বিদ্রোহী কবি গাইলেন ‘আবার ভালোবাসার সাধ জাগে’।

কত বিচিত্র ভালোবাসার রঙ মানুষের জীবনজুড়েই। আমরা ভালোবাসতেই ভালোবাসি, কেউ পূর্ণতায়, কেউবা অপূর্ণতায়। শূন্যস্থান তবে কেন জায়গা নেয়?মানুষ নিজের মতো ভালোবাসতে চায়, নিজের মতো ভাবতে চায়, নিজের মতো করেই অন্যকে দেখতে চায় তার আয়নায়। খটকাটুকু সেখানেই। ভালোবাসার মানুষগুলো অন্যকে অন্যের মতো করে ভালোবাসতে স্বাধীনতা দিতে পারে না কেন যেন। হারানোর ভয় সেখানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় জীবনবহতায়। কেউ ধাক্কা খেয়ে শেখে, কেউ ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে শেখে, কেউবা খুব একা হয়ে শেখে, কেউবা ভীষণ আঘাতে স্তব্ধ হয়ে যায়, কত কী হয় এই ভালোবাসায়।জীবনযাপনের অভ্যস্ততারও ভালোবাসার ব্যাপার রয়েছে। দুই জন মানুষ এক জানালা দিয়ে একই বিষয় দেখে না, কেউ আকাশ দেখে, কেউবা দেখে পথ! কারণ দুই জন মানুষের বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণ আলাদাভাবেই। তাই দেখার দৃষ্টি যখন এক হয় ভালোবাসায়, তখন কেউ একজন অন্যের মতো নিজেকে তৈরি করে নেয়। তৈরি হওয়া মন সুখী থাকে ততক্ষণ, যতক্ষণ সাবলীল থাকে কথোপকথন। নিজস্ব আশ্রয়ের আস্থাটুকু না থাকলে বাধাটা নিজের মনেই তৈরি হয়। নিজেকে মানসিকভাবে সাবলম্বী করতে পারলে অস্থিরতা ভালোবাসাকে ধরে রাখতে পারে না। আর তখনই নিজেকে খোঁজার বেদনায় সাবলীলতা হারায়। আর হারায় বলেই পুরিপূর্ণতার ভালোবাসা নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

ভালোবাসা আসলে নিজের স্বচ্ছ আয়না। ভালোবাসতে মন একাই এক গতিতে চলে। ভালোবেসে যায়, সমঝোতা করে, দায়িত্ব নেয়। ভালোবাসায় কোনও তর্ক চলে না। ভালোবাসা একটা গতি, তাকে তার মতো করেই ভালোবাসতে হয়। মা সন্তানকে ভালোবাসবেই শর্তহীন, দম্পতি ভালোবাসবেই বন্ধনে। আবার কেউ ভালোবাসবে একা একাই, কেউবা সারাজীবন ভালোবাসার অতৃপ্তিতেই রয়ে যাবে।  তাই হয়তো ভালোবাসার জন্যই মানুষ ছুটে চলে আপন গতিতে, যার যার অভিজ্ঞতায় ও চেতনায়। সারাজীবনের ছোট ছোট ভালোবাসাগুলোকে ধরতে হয় প্রজাপতির মতো অকৃত্রিমতায়। আসলে হাতের ওপর হাত রাখলেই হাতে হাত রাখা হয় না! তার জন্য সাবলীল প্রতিদিনের হাতে রাখা হাতটা বহন করতে শেখাটাই ভালোবাসা।

লেখক: সংগীতশিল্পী

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn