সিরিজ জয়ের জন্য বাংলাদেশের ৯ বছরের অপেক্ষা
৯ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজেকে হোয়াইটওয়াশ করার পরও ছিল কিছু অপ্রিয় সমালোচনা। সেবার ক্যারিবীয় দলে সেরা ক্রিকেটাররা ছিলেন না বিদ্রোহ করে। তাই বলা হচ্ছে ক্যারিবীয়দের সবচেয়ে দুর্বল দলের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, হোল্ডারদের মতো ক্রিকেটার ছাড়াও হেটমায়ারের মতো দারুণ প্রতিভাবান তরুণরাও ছিলেন দলে। অন্যদিকে সেন্ট কিটসের উইকেট ব্যাটিং স্বর্গ। যেখানে গেইল ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলে ৩শ’ লক্ষ্যও কিছু নয়। সেখানে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি অধিনায়ক মাশরাফি। তবে দলের ৩৫ রানের সময় এনামুল বিজয়ের ১০ রানে বিদায় ছিল ছোটখাটো ধাক্কা। সেখান থেকে নিজেদের সামলে তামিম এগিয়ে নিয়েছেন একটু একটু করে। তাকে সঙ্গ দিতে এসে সাকিব ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফিরে যান। তবে এ দুজনের জুটিতে দ্বিতীয় উইকেটে ৮১ রান আসে ৯৬ বলে। এরপর দলের আরেক ব্যাটিং ভরসা মুশফিকুর রহীমও ১২ রানে হাল ছাড়েন। যেখানে ২৮০ থেকে ৩০০ না করলে জয় কঠিন সেখানে একটা সময় ২৫০ হবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ হতে থাকে। কিন্তু তামিম ধীর লয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। মারার বল ঠিকই মেরেছেন। তারপর পরিস্থিতি বদলে দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। তামিমের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়েন ৪৬ বলে। সেঞ্চুরির পর পরই রান বাড়াতে গিয়ে আউট হন তামিম। ফিরেছেন ১২৪ বলে ১০৩ করে।
কিন্তু বড় চমকের অপেক্ষাটা ছিল টাইগার ভক্তদের। তরুণদের উপর ভরসা রাখতে না পেরে নিজেই ব্যাট হাতে নেমে গেলেন অধিনায়ক মাশরাফি। ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে দলকে তিনশর পথে নিয়ে যায় তার এ সাহসী সিদ্ধান্ত। দারুণ সব শটে মাশরাফি বদলে দেন ইনিংসের গতি। দুজন ৫৩ রানের জুটি গড়েন ৭ ওভারে। চারটি চার ও ১ ছক্কায় মাশরাফি ফেরেন ২৪ বলে ৩৬ রান করে। শেষ দিকের দাবি মিটিয়ে ৪৯ বলে ৬৭ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদুল্লাহ। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৯৬ রান। শেষে সাব্বির রহমান ৯ বলে ১২ করে আউট হন। মোসাদ্দেক ৫ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছে ৩০১/৬-এ। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তাড়ার শুরুটা খারাপ ছিল না। আগের দুই ম্যাচে ধীর গতিতে শুরু করলেও গেইল এদিন ছিলেন আগ্রাসী। তবে এভিন লুইস ছিলেন ব্যর্থতার বৃত্তেই। বলে ব্যাট ছোঁয়াতেই ধুঁকছিলেন। গেইলের সৌজন্যে তবু ১০ ওভারে ৫৩ রান ওঠে উদ্বোধনী জুটিতে। সিরিজে টানা তৃতীয়বার দলকে প্রথম উইকেট এনে দেন মাশরাফি। তিনবারই তার শিকার ভয়ঙ্কর এভিন লুইস। তবে ধীরে ধীরে গেইলই ভয় ধরিয়ে দিতে শুরু করেছিলেন ছক্কা স্টেডিয়ামের ছাদে উড়িয়ে ফেলে। তবে তার সঙ্গী শেই হোপ ছিলেন শান্ত। দুু’জনের ৫২ রানের জুটিতে হোপের রান ৩২ বলে ১৪! তবে গেইল আতঙ্ক থেকে মুক্তি দেন রুবেল হোসেন। তার ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৬৬ বলে ৭২ করে ক্যাচ দেন লং অনে। এর পর দলের হাল ধরেন হেটমায়ার। হোপকে নিয়ে ৬৭ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা হেটমায়ারকে ৩০ রানে বোল্ড করে মিরাজ। অবশ্য হোপ আউট হতে পারতেন আরো আগেই। ৩৬ রানে মিরাজের বলে লং অফে তার ক্যাচ ছাড়েন রুবেল। তবে মাশরাফি ফিরে এসে ৬৪ রান করা হোপকে বিদায় করেন। মনে হচ্ছিল এখানেই হয়তো নুইয়ে পড়বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু না, দুর্দান্ত সব শটে ম্যাচ জমিয়ে দেন রভম্যান পাওয়েল। প্রথম ৫ ওভারে ১০ রান দিয়েছিলেন যে মোস্তাফিজ, তার পরের ৩ ওভার থেকে আসে পাওয়েলের ৩৮ রান! তার ব্যাটে শেষ ৩ ওভারে ৪০ রান, তখন অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। কিন্তু অধিনায়কের ভরসাতে মোস্তাফিজ গুছিয়ে নেন নিজেকে। শুধু তাই নয়, ৪৯তম ওভারে দুর্দান্ত বোলিংয়ে কেবল ৬টি সিঙ্গেল দেন রুবেল। শেষ ওভারের প্রথম বলে মোস্তাফিজ ছক্কা হজম করলেও পরের ৫ বলে দেন ৩ রান।