আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে : র্যাব ডিজি
বাসচাপায় দু’জন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনার পর ৪ দিন ধরে আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ক্রমাগতভাবে ঢাকা শহরকে অচল করে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ করে গত দু’দিন ধরে স্কুলছাত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও একত্রিত হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর হাত থেকে নিজেদের সন্তানদের ঘরে ফিরিয়ে নিতে অভিভাবকদের এবং প্রাতিষ্ঠানিক অভিভাবকদের তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তা থেকে শ্রেণি কক্ষে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে র্যাব সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি। র্যাব ডিজি বলেন, আমরা নিহত দুই শিক্ষার্থীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। গত ২৯ তারিখের ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা যে দু’টি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে তাদের চালক হেলপারসহ ৪ জনকে আটক করেছি। যে বাসটি শিক্ষার্থীদের চাপা দিয়েছে সেই বাসের চালককেও আমরা আটক করি। মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করি। গতকাল আমরা ওই বাসের মালিককেও গ্রেফতার করেছি। আজ নিহত দুই পরিবারকে ২০ লাখ করে টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ঘটনায় মামলা হয়েছে। ডিবি পুলিশ মামলা তদন্ত করে দেখছে।
তিনি আরও বলেন, দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পরপর কিছু স্কুলছাত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে। আমরা প্রত্যেকের মানসিক অবস্থাটা বুঝতে পারি। তাদের একজন বন্ধু কিংবা সহকর্মী মারা যাওয়ায় তাদের আবেগ কাজ করতেই পারে। সেটাও আমরা এপ্রিসিয়েট করছি। কিন্তু গত চারদিন ধরে ক্রমাগতভাবে ঢাকা শহরকে অচল করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। বিশেষ করে গত দু’দিন ধরে স্কুল ছাত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন সুবিধাবাদী গোষ্ঠীও একত্রিত হচ্ছে। নিষ্পাপ শিশুদের ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আজও ৯টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। গত ৪ দিন ৩১৮টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। র্যাব ডিজি বলেন, আজকে ধানমন্ডিতে একজন সার্জেন্টকে ডেকে মারপিট করা হয়েছে। সেগুনবাগিচায় সরকারি অফিসে হামলা হয়েছে। মিরপুরের কাফরুল থানায় হামলা করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, এই অবুঝ শিশু ছাত্রদের স্বর্তস্ফূর্ত যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ তা সম্বল করে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই পুরো বিষয়টিকে ভিন্নখাতে পরিচালনার চেষ্টা করছে। গত চারদিন ধরে ঢাকার শহরের জনগণ জিম্মি। পরিহন ব্যবস্থা অচল। মানুষ কোথাও যেতে পারছে না। প্রেসার নিতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, এই যে অবস্থা এখান থেকে এখন উত্তরণ দরকার। দুই নিষ্পাপ প্রাণ চলে যাবার প্রেক্ষিতে যে ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি ছিল তা নেয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিহতের পরিবারকে অনুদান দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখন যেহেতু দেখছি এখানে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও বিশেষ গোষ্ঠী স্বতঃস্ফূর্ত সমবেদনা বা আবেগের বহিঃপ্রকাশকে ভিন্নখাতে পরিচালনা করে গোষ্ঠী স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে আমরা আহ্বান জানাবো প্রত্যেক অভিভাবককে। তাদের সন্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব জন্য তাদের উপর খেয়াল রাখবেন। যাতে করে এই ধরনের অপচেষ্টায় তাদের সন্তানদের কেউ ব্যবহার করতে না পারে। বেনজীর বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমরা র্যাব-১ এর সামনে একটা ছাত্রকে আরও কিছু লোকজন দ্বারা মারপিট করতে দেখেছি। তার মানে হচ্ছে এই আন্দোলনে বিভিন্ন ধরনের মানুষ ও গোষ্ঠী ঢুকে গেছে। এই সুযোগে তারা স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। আমরা অভিভাবকদের বলতে চাই, তাদের যে সন্তান এখনো রাস্তায় আছে তারা নিরাপদ নাও থাকতে পারে। এই সুযোগে যেসকল সন্ত্রাসী রাস্তায় নেমেছে, সেসকল সন্ত্রাসী যে কোনো সময় যে কারো ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমরা অনুরোধ জানাই, অভিভাবকগণ তাদের প্রিয় সন্তানদের স্বার্থে তাদেরকে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেবেন। একই সঙ্গে প্রত্যেকটি স্কুল ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকমণ্ডলীকে অনুরোধ জানাবো, নিজ নিজ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে কোনোক্রমে রাস্তায় না নামতে পারে তা নিশ্চিত করবেন। কেউ রাস্তায় আসলেও দয়া করে ফেরত নিয়ে যাবেন। ছাত্রদের স্থান শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষকগণ সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই আহ্বান জানাবো স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের প্রতি। তাদের ছাত্রছাত্রীরা যেন রাস্তায় না আসেন। আসলেও যেন শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নেন। তিনি আরও জানান, কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরও রাস্তায় দেখা গেছে। তাদেরকেও আমরা অনুরোধ করবো। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যে ধরনের আইনি কার্যক্রম নেয়া দরকার ছিল তা নেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা ফিরে যাও। কর্তৃপক্ষদের অনুরোধ করবো। তাদের শিক্ষার্থীরা যেন পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন। ফেসবুকে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। কেউ কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। কোনো ধরনের গুজবের কারণে বিপথে পরিচালিত হবেন না।