বার্তা ডেক্স :: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে জেলা-উপজেলার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো পুনর্গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ এবং নিষ্ক্রিয় ইউনিটগুলোতে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলের কেন্দ্রীয় সংসদের এমন সিদ্ধান্তে সিলেটেও উঠেছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সুর। দলের নেতাকর্মীরও চান প্রায় পাঁচ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। এতে দল আরো চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন তারা। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে গঠন হওয়া সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালে। এরপর প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হলেও উদ্যোগ নেয়া হয়নি সম্মেলনের। কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি গঠনের কোন নির্দেশনা আসেনি। ফলে এ মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিই বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে কার্যক্রম।

দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় স্থবিরতা এসেছে তৃণমূলে। জেলা আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৩টি উপজেলা কমিটির মধ্যে শুধুমাত্র বিশ^নাথে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। বাকি ১২টি উপজেলা কমিটি চলছে ২/৩ জন দিয়ে। কমিটিগুলো মেয়াদোর্ত্তীণ হয়ে গেলেও সম্ভব হয়নি পূর্ণাঙ্গ করা। আর বেশীরভাগ উপজেলায়ই দায়িত্বে আছেন বর্ষীয়ান নেতারা। জেলার মতো অবস্থা মহানগরেরও। ২৭ ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে কমিটি নেই। যেগুলোতে কমিটি আছে সেগুলোও দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় পদবঞ্চিত নেতারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন রাজনীতিতে। রাজনীতির চেয়ে এখন তারা বেশি ব্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ও পেশা নিয়ে। ফলে সাংগঠনিক কাজে বিরাজ করছে স্থবিরতা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন কেবল বিভিন্ন দিবসের আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল আর শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর বাইরে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে বা সরকারের উন্নয়ন প্রচারে কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগকে। মাঝে মধ্যে কেন্দ্র ঘোষিত যেসব কর্মসূচি পালিত হয় সেগুলোতেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের বেশিরভাগ নেতারাই থাকেন অনুপস্থিত। নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার ফলে সাধারণ কর্মীরাও দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন রাজনীতিতে।

দলকে সুসংগঠিত ও চাঙা করতে নতুন কমিটি গঠনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, গত ১০ বছর দল ক্ষমতায় থাকায় অনেক নেতা রাজনীতিতে সময় না দিয়ে অর্থ উপার্জনে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। এদের কারণেই কেন্দ্রের কাছে সিলেটের দলীয় সাংগঠনিক কাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। গেলো জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ ও সিটি নির্বাচনেও অনেক নেতা দলের সাথে বিশ^াসঘাতকতা করেছেন বলে দাবি তৃণমূলের। এ নিয়ে তারা একাধিকবার কেন্দ্রে অভিযোগও করেছেন। তাই আগামীতে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের দিয়ে কমিটি গঠন ছাড়া দলকে চাঙা করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন তারা। তাদের দাবি, নতুন কমিটি গঠন হলে নিষ্ক্রিয় নেতারা বাদ পড়বেন এবং উপজেলা-ওয়ার্ডগুলোতে দলকে পুনর্গঠন করা সম্ভব হবে। এতে দলের কার্যক্রমেও আসবে গতিশীলতা। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দলকে আরো সুসংগঠিত করতে কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে কাজ চলছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছেন। তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সে আলোকেই আমরা কাজ করছি। কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ দেয়া হলে আমরা প্রস্তুতি শুরু করে দেব।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn