বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে জেলা নেতাদের প্রস্তাবে সায় মেলেনি খালেদা জিয়ার। উপনির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। তার নামে কোনো ফরমও জমা দেয়া হচ্ছে না। বিএনপির দুইজন দায়িত্বশীল নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বগুড়া জেলা নেতাদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠকের আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় বগুড়ার স্থানীয় নেতারা রাজনৈতিক আবেগ থেকে প্রার্থী হিসেবে খালেদা জিয়ার নাম প্রস্তাব করেন। স্থানীয় নেতাদের আবেগের বিষয়টিকে বিবেচনা করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিক কোন সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি আলোচনায় উঠে আসা ৫ নেতার নামেই ফরম জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন। এদিকে উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করার বিষয়টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারাবন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া অবহিত হন। তবে তিনি তাতে সায় দেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আর যাই হোক- তিনি কোনো উপনির্বাচনে অংশ নেবেন না।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া ও ফেনীর তিনটি আসনে প্রার্থী হিসেবে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন দলটির নেতারা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন ফরম বাতিল ঘোষণা ও উচ্চ আদালত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়ে তিনি আর নির্বাচন করতে পারেননি। এদিকে আগামী ২৪শে জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে জেলার সর্বত্রই চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। ইতোমধ্যই এ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অপরদিকে বেগম খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন নেতারা। এমন তথ্য জানিয়েছিলেন, বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেছেন, এ পাঁচ প্রার্থীকে আগামী ২৩শে মে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে। পরে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের আগে একজনকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে। তবে ইতিমধ্যে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। এ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া চারজন হলেন- বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চান।

গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, মঙ্গলবার বিকালে ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় স্কাইপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্ত হন। সেখানে তিনি সবার মতামতের ভিত্তিতে এ উপনির্বাচনে প্রাথমিকভাবে ৫ জনকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে বলেন। সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপি কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনে অনায্যভাবে বাতিল করা হয়েছিল খালেদা জিয়ার মনোনয়ন ফরম। আইনগতভাবে এখনও নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে তার। এই জন্য নেতারা তার জন্য ফরম তুলেছেন। তারা প্রত্যাশা করেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। বগুড়া-৬ আসনের সর্বস্তরের লোকজন প্রার্থী হিসেবে তাকেই চান।

কারণ এই আসন থেকে তিনি একাধিকবার জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তার সায় মেলেনি। দলটির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, শেষ পর্যন্ত বগুড়া জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরিজই হতে পারেন বগুড়া-৬ উপনির্বাচনে দলের চূূড়ান্ত প্রার্থী। বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ হয় তাহলে এখানে বিএনপি প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে। বগুড়ার সাধারণ মানুষও ভোটের সময় নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিএনপির হয়ে কাজ করে। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক টি জামান নিকেতা। উল্লেখ্য, বগুড়া-৬ (সদর) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে মির্জা ফখরুল নির্বাচিত হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শপথ না নেয়ায় গত ৩০শে এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ৮ই মে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn