যুবরাজ যার পরামর্শে চলতেন তারই শিরোশ্ছেদ চাওয়া হচ্ছে!
বার্তা ডেস্ক :: নিজের বাড়িতে বসে আছেন বিখ্যাত আলেম শেখ সালমান আল-আওদা। সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি মোহাম্মদ বিন সালমান তার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। তার আসার জন্যই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন তিনি। এটা ছিল ২০১২ সালের ঘটনা। তখনকার ২৭ বছর বয়সী যুবক যুবরাজ মোহাম্মদ এই ক্যারিশম্যাটিক ধর্মপ্রচারকের ভক্ত ছিলেন। এবার সেই আওদাকে কারাগারে আটকে রেখে নির্যাতন-নিপীড়নে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আদালতের কাছে তার শিরোশ্ছেদ চাচ্ছেন কৌঁসুলিরা। খবর সিএনএনের। আওদার ছেলে আবদুল্লাহ আলাউদ সেই কথাই বলছিলেন। তিনি জানান, যুবরাজের এই আসা-যাওয়াকে আমরা বড় কোনো ঘটনা বলেই মনে করতাম না। ওয়াশিংটনভিত্তিক জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, তখন মোহাম্মদ বিন সালমান একজন মামুলি যুবরাজ ছিলেন। উচ্চাভিলাষী হওয়া সত্ত্বেও তাকে একজন রাজনৈতিক শিক্ষানবিশই ভাবা হতো। তিনি বলেন, তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ তখনো সিংহাসনে আরোহন করেননি। ছিলেন রিয়াদের গভর্নর। সৌদির রাজনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসে কয়েক হাজার রাজপরিবারের কেবল একজন সদস্য ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে নামের আদ্যাক্ষর এমবিএস নামে খ্যাতি পান যুবরাজ মোহাম্মদ। সৌদিতে একটি পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকে আওদার মতাদর্শ নিয়ে তার ভেতর আগ্রহ দেখা গেছে।
আবদুল্লাহ আলাউদ বলেন, এই বৈঠক এবং আরও দুটি বৈঠক হয়েছিল। রয়েল কোর্টে ভবিষ্যৎ বাদশাহ সালমানের সঙ্গে একটি বৈঠকে সংস্কার ও সবার অংশগ্রহণে সরকার গঠনের তারিফ করেছিলেন আওদা। তখন এই ধর্মপ্রচারকের বয়স ছিল ৫৫ বছর। বছর পাঁচেক পরে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি ঘোষণা করেন বাদশাহ সালমান। এমবিএস পদোন্নতি পাওয়ার তিন মাস পর আওদাকে গ্রেফতার করেন। সৌদি সিংহাসনের উত্তরসূরি হিসেবে সদ্য অভিষিক্ত হওয়া যুবরাজের ধরপাকড় অভিযানে আটক করা হয়েছে তাকে। বছরখানেক বিচারবহির্ভূত আটক রাখার পর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের কৌঁসুলি আওদার বিরুদ্ধে ৩৭টি অভিযোগের তালিকা তৈরি করেন। এসব অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে তার শিরোশ্ছেদের শাস্তি চাওয়া হয়েছে।
রোববার তাকে নতুন করে আদালতে হাজির করা হবে। এতে এ মামলায় তার শুনানি হবে কিনা তা নির্ধারণ করবেন বিচারক। যদি তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হন, তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে। বিখ্যাত এই সৌদি আলেমকে দুই বছর নির্জন কারাবাসে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এসময় কারও সঙ্গে তাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি। আলাউদ বলেন, বন্দিত্বের প্রথম কয়েক মাস তার পায়ে শিকল ও হাতে কড়া পরিয়ে রাখা হয়েছে। আর কারাপ্রহরী তার দিকে খাবার ছুড়ে মারতেন। আটকের প্রথম ছয় মাস কারও সঙ্গে তাকে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। যখন প্রথমবার পরিবারের সাক্ষাৎ পান, তখন তিনি বলেন, তাকে ঠিকমতো খাবার ও ঘুমাতে দেয়া হয় না। তার কাছ থেকে বিভিন্ন নথিতে সই নেয়া হয়েছে জোরপূর্বকভাবে। সম্ভবত সেটা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি হবে। তিনি কিছু বুঝতে পারেননি। কারণ তার মানসিক ও শরীরিক অবস্থায় এতটাই দুর্বল যে কী ঘটছে, তার পক্ষে তা বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। পরিবারকে আওদা বলেন, তিনি কিছু নথিতে সই করেছেন। কিন্তু তাতে কী লেখা ছিল, তা তিনি বুঝতে পারেননি। জবরদস্তিমূলক জবানবন্দিতে সই নেয়ার অভিযোগ সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আগে থেকেই রয়েছে। তার সন্তান বলেন, তার বাবাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। কারণ তার রক্তের চাপ বেড়ে গেছে। কোলেস্টরলের মাত্রাও। বেশ কিছুদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে রাখতে হয়েছে। ২০১৭ সালের দিকে সৌদি আরবে জবরদস্তিমূলক জবানবন্দি আদায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে জাতিসংঘ। পরবর্তী সময়ে চিঠি দিয়ে সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে রিয়াদ। অভিযোগপত্র অনুসারে, নিজের তৎপরতা নিয়ে আওদার স্বীকারোক্তি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের পক্ষে এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। আওদার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে সিএনএনের তরফে জানতে চাইলে সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। সৌজন্যে : যুগান্তর