মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগে সিন্ডিকেট দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ
ওয়ান-ইলেভেনের সময় দেশ-বিদেশে নেত্রীর মুক্তির জন্য কাজ করেছি। জেলজুলুম সহ্য করেছি। কিন্তু দলের কর্মীও নয়- এমন অনেকেই দলে স্থান পেলেও আমাকে জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি’। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল বলেন, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামত উপেক্ষা করে নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে একটি বলয়ের হাতে জেলা কমিটি তুলে দেয়া হয়েছে। ওই কমিটিতে স্থান পাওয়া অধিকাংশই ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, যারা দলের সুবিধাভোগী লুটেরা তাদের হয় প্রমোশন। আর আমরা যারা দলের জন্য নিবেদিত সৎ ও স্বচ্ছ রাজনীতি করি তাদের হয় ডিমোশন। সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলীর সহধর্মিণী সৈয়দা সায়রা মহসীন বলেন, কিভাবে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন? মরহুম মন্ত্রীর স্মরণসভাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে তাদের দাওয়াত দিয়েও পাওয়া যায় না। তারা প্রয়াত মন্ত্রীর সমর্থক, ভক্ত ও অনুসারীদের কিভাবে কোণঠাসা করে রাখা যায়- শুধু সেই চিন্তায় মগ্ন। তিনি বলেন, জেলা কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছেন সে তালিকা দেখলেই বুঝতে পারবেন দলের কার্যক্রম গতিশীল হবে কি-না? জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন বলেন, নতুন কমিটি হওয়ার পর সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রাণচাঞ্চল্য নেই বললেই চলে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দলের সভাপতি সম্পাদকসহ অধিকাংশই একই বলয়ের হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। কমিটিতে অনেকেই স্থান পেয়েছেন যারা কোনোদিনও দলীয় মিছিল মিটিংয়ে ছিলেন না। তারা দোকানদার কিংবা লন্ডন, আমেরিকা প্রবাসী। তাই অনেক সময় দলীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় কোরাম সংকটও দেখা দেয়। তার মতে, মহসীন আলী বলয়ের একটি বড় অংশকে বাইরে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা করা সম্ভব নয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাধাপদ দেব সজলের মতে, আগের যেকোনো সময়ের চাইতে এখন জেলায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা।
জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যোগ্য নেতৃত্বে সুশৃঙ্খলভাবে দলীয় কার্যক্রম চলছে। দলে কোনো অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোই তার বাস্তব প্রমাণ। দলের সাংগঠনিক অবস্থা আরো গতিশীল করতে ৩টি উপজেলা ও ১টি পৌরসভায় সম্মেলন ও কাউন্সিলের জন্য বর্ধিত সভা করা হয়েছে। আগামীতে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো সক্রিয় এবং দৃশ্যমান হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিছবাহুর রহমানও বলেন, নতুন কমিটি হওয়ার পর দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চাঙ্গা। এ পর্যন্ত ৪টি কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ও ২টি বর্ধিত সভা হয়েছে। উপস্থিতিও সরব ছিল। প্রত্যেকটি উপজেলা ও পৌর কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো ত্বরান্বিত করতে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশানুযায়ী খুব শিগগিরই সম্মেলন ও কাউন্সিল হবে। ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ১২ই অক্টোবর জুড়ী ও ১৩ই অক্টোবর শ্রীমঙ্গল উপজেলার সম্মেলন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা ভেদাভেদ নেই। যারা এগুলো ছড়াচ্ছে তা সঠিক নয়। জেলা আওয়ামী লীগে কোনো গ্রুপ বা বলয় নেই দাবি করে সাধারণ সম্পাদক বলেন, বড় দল তাই অনেকের কমিটিতে স্থান হয়নি, এটাই স্বাভাবিক। এতে সভাপতি সম্পাদককে দায়ী করা ঠিক নয়। প্রতিযোগিতায় ঠিকে থাকতে হলে মাঠে সক্রিয় হতে হয়। কাজ করতে হয়। তিনি জানান, প্রয়াত সৈয়দ মহসীন আলীর স্মরণসভায় গেল বছর তারা অংশ নিয়েছিলেন। এ বছর দাওয়াতই পাননি। তার মতে, এ নিয়ে ভেদাভেদ সৃষ্টি করা ঠিক নয়।