চার বছরের প্রেম, বিয়ে অতঃপর…
ভূঞাপুর টাঙ্গাইল;‘প্রেম মানে না ধর্ম-অধর্ম, প্রেম মানে না জাতকুল’-এ প্রবাদ বাক্য বাস্তবে রূপ দিতে গিয়ে আজ সুমন ও তার পরিবার নিঃস্ব। সুমন-তৃপ্তির চার বছরের প্রেম। গত ২৩শে এপ্রিল তারা গাজীপুর গিয়ে এক লাখ টাকা দেনমোহরে আদালতের মাধ্যমে পালিয়ে বিয়ে করেন। তবে ব্যাপারী বংশের ছেলের সঙ্গে মন্ডল বংশের মেয়ের এ সম্পর্ক মেনে নেয়নি তৃপ্তির পরিবার। তাদের বক্তব্য, ‘নিচু’ জাতের ছেলের সঙ্গে এ বিয়ে হতে পারে না। তাই সুমনকে না পেয়ে ওইদিন রাতেই তার বাবা, মা ও ভাইকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় তৃপ্তির পরিবারের লোকজন। সারা রাত তাদের বেঁধে রেখে করা হয় মারধর। পরদিন সকালে তৃপ্তির বাবার করা অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। ২০ দিন পর সুমনের মা এবং তিন মাস পর বাবা ও ভাই জামিনে মুক্তি পান।
এরই মধ্যে বিয়ে মেনে নেয়ার কথা বলে সুমন ও তৃপ্তিকে কৌশলে ডেকে নেয়া হয়। বসে সালিশ বৈঠক। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, তৃপ্তি আর সুমনের সঙ্গে সংসার করবেন না এবং তার বাবা মামলা তুলে নেবেন। তবে তা আর হয়নি। এখন অপহরণের মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সুমন। আর মামলার খরচ চালাতে গিয়ে এরই মধ্যে ভিটেবাড়ি বাদে সব জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে তার পরিবার। খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে তাদের। সিনেমার কাহিনীর মতো এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া গ্রামে। সুমনের পুরো নাম সুমন আহম্মেদ। বেলুয়া গ্রামের সবর ব্যাপারীর ছেলে তিনি। টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে ডিপ্লোমা শেষ করে একটি গার্মেন্টের আইটি বিভাগের কর্মী তিনি। আর কলেজ ছাত্রী ফাতেমাতুজ জহুরা তৃপ্তি একই গ্রামের সুলতান আহম্মেদের মেয়ে। সুমন জানায়, তৃপ্তির বড় ভাই শয়নের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকায় তাদের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। একপর্যায়ে তৃপ্তি ও তার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার বছর ধরে চলে সম্পর্ক। তৃপ্তি ভালোভাবেই জানত, পারিবারিকভাবে এ বিয়ে তার বাবা কখনোই মেনে নেবেন না। জন্মসনদ অনুযায়ী এ বছর এপ্রিলের ২৩ তারিখ তার বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে গাজীপুর গিয়ে এক লাখ টাকা দেনমোহরে আদালতের মাধ্যমে তারা বিয়ে করে। সুমন আরো জানায়, তার ভাই একটা এনজিওতে চাকরি করতেন।
তিন মাস জেলে থাকায় তার চাকরি চলে যায়। সুমন আর তৃপ্তি বাসা ভাড়া নিয়ে গাজীপুরেই সংসার করতে থাকেন। এর মধ্যে তৃপ্তির বাবা জানান, তাদের সম্পর্ক মেনে নেবেন এবং মামলার বিষয়ে সমাধান করবেন। এটা যে তৃপ্তির বাবা সুলতান আহমেদের একটা চাল ছিল তা বুঝতে পারেনি সুমন-তৃপ্তি। সেই খবর পেয়ে তৃপ্তিকে নিয়ে সুমন তার বোনের বাড়ি মধুপুরে যায়। সেখান থেকে তৃপ্তিকে তার বাবা ও স্বজনরা নিয়ে যান। পরদিন চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক সালিশ হয়। মেয়ের বয়স হয়নি জানিয়ে তৃপ্তির বাবা সুমনের কাছে তৃপ্তিকে আর দেবেন না এবং মামলা তুলে নেবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কিছুদিন পর মামলা না তুলে উল্টো তৃপ্তিকে ভয় দেখিয়ে সুমনের বিরুদ্ধে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এ বিষয়ে গোপালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত শেষে সুমনকে প্রধান করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।