জাতিসংঘে তহবিল সংকট, সীমিত হতে পারে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম
চরম তহবিল সংকটে জাতিসংঘ। পরিস্থিতি এ পর্যায়ে গেছে যে, সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, অর্থ সংকটের কারণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বরাদ্দ থেকে অন্য খাতে তাকে খরচ করতে হয়েছে। শেষ হয়ে আসছে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সেই রিজার্ভও। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, মাস শেষের আগে অর্থ না পেলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমও সীমিত করে দেয়া হতে পারে। এমনটা চলতে থাকলে নভেম্বরে বেতন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘের তরফে বলা হয়েছে- বিগত এক দশকের মধ্যে ‘সবচেয়ে বড় অর্থ সংকট’ এর সম্মুখীন সংস্থাটি। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, চলতি মাস শেষে আর কর্মসূচি পরিচালনার মতো আর্থিক সক্ষমতা নাও থাকতে পারে সংস্থাটির।
মঙ্গলবার সদস্য রাষ্ট্রদেশগুলোকে এমনটি জানিয়েছেন, মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বাজেট নির্ধারণী ফিফথ কমিটির উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য দেশ সংগঠনটির বার্ষিক বাজেট পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জমা দেয়নি।ফলে, একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে তাদের বাজেট তহবিল। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিকও পৃথক বিবৃতিতে জানান, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজেটের মাত্র ৭০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করেছে সদস্য দেশগুলো। গত বছর একই সময়ের মধ্যে পরিশোধিত হয়েছিল ৭৮ শতাংশ অর্থ। বিবৃতিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের বাজেট পূরণে অর্থ দিয়েছে ১২৯ দেশ। তবে সিরিয়াসহ আরো ৬৪টি দেশ এখনো অর্থ পরিশোধ করেনি। জরুরি ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে তাদের। চলতি বছরের জন্য দেশগুলোর অপরিশোধিত অর্থের পরিমাণ ১৩০ কোটি ডলার। ফিফথ কমিটির সামনে দেয়া বক্তব্যে জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, সংকট মোকাবিলায় অবিশ্বাস্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে রয়েছে, খালি পদে নতুন লোক না নিয়োগ দেয়া, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ ছাড়া সব ধরণের ভ্রমণ সীমিত করে দেয়া, একাধিক বৈঠক বাতিল বা পিছিয়ে দেয়াও রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, জাতিসংঘের সার্বিক কর্মসূচিই আক্রান্ত হবে এই অর্থ সংকটে। অর্থ না পরিশোধ করা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পূর্ববর্তী বাজেটে নির্ধারিত ৩৮ কোটি ১০ লাখ অর্থ পরিশোধ করেনি দেশটি। আর চলতি বছরের বাজেটে এখনো ৬৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার অপরিশোধিত রেখেছে মার্কিন সরকার। যদিও সাধারণত বছরের শেষ প্রান্তিকেই অর্থ পরিশোধ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ১৪৬ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন। আহত হয়েছেন ২২৭জন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এ প্রকাশিত মধ্য জুনের এক পরিসংখ্যান বলছে, ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৮১জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী জাতিসংঘে কাজ করেছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৬ শ ১৬ জন নারী। প্রায় ৬ হাজার ৫’শ বাংলাদেশি বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে রয়েছেন, যারা আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কর্মরত।