যুবলীগের সম্মেলন ২৩ নভেম্বর, আসছে নতুন নেতৃত্ব
বার্তা ডেস্ক :: চলমান ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে থাকা আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। আগামী ২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সংগঠনটির সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। সেই সম্মেলনে বিতর্কিত নেতাদের সরিয়ে দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের অনির্ধারিত এক বৈঠকে যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ হয়। সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ আরও দুই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগেরও সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন তিনটি সহযোগী ও একটি ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে৷ এর মধ্যে কৃষক লীগের ২ নভেম্বর, ৯ নভেম্বর জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সন্মেলনের প্রাথমিকভাবে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষক লীগের সম্মেলনের তারিখ দুই-একদিন আগে পরে হতে পারে।
সম্প্রতি মাদক, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর অভিযানে নেমে ক্যাসিনো বা অবৈধ জুয়ার সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, যেখানে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়। আর এর পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের নেতারা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু অভিযানে যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। অভিযান শুরুর পরপর যুবলীগ চেয়ারম্যান কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও বিচার দাবি করেন। তবে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে এই অভিযান চলছে জেনে একদিন পরই তার সুর নরম হয়ে আসে। ইতিমধ্যে তার ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ ভ্রমণের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এছাড়া যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের আরও কয়েকজন নেতাও আছেন নজরদারিতে। এই অবস্থায় যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব আসছে এমন একটা জোর প্রচার রয়েছে। যুবলীগসহ সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। অনির্ধারিত এই বৈঠকে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন। আগামী নভেম্বরের মধ্যে এসব কমিটির সম্মেলন শেষ করতে নির্দেশ দেন।
বৈঠকে ৭৫ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ওপর করা নিপীড়নের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে ঘরে বাইরে সব শত্রু মোকাবেলা করে, দলটাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছি। আদর্শের নেতা যারা তারা কখনো এই দলের ক্ষতি করবে না, করতে চায়ও না। যারা সবসময় ‘গভর্নমেন্ট পার্টি’ হিসেবে এই দলে আছে তারাই এই দলটার ক্ষতি করে এবং তাদেরকে যারা সুযোগ করে দেয় তারাও এই দলের প্রকৃত সৈনিক না। আমার দলের সৈনিক তারাই যারা ত্যাগ-তিতিক্ষা শিকার করে দলটাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবসময় গভর্নমেন্ট পার্টি যারা করেন তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই দল থেকে বের করে দেয়া হবে।’ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।
যুবলীগের তিন বছর মেয়াদী সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। ওই সম্মেলনে ওমর ফারুক চৌধুরী চেয়ারম্যান এবং হারুনুর রশিদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ দ্বিতীয় সম্মেলন হয় ২০১২ সালের ১১ জুলাই। ওই সম্মেলনে মোল্লা মো. আবু কাওছার সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ২০০৩ সালে সংগঠনটির প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম সভাপতি ও পঙ্কজ দেবনাথ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে মোতাহার হোসেন মোল্লা সভাপতি ও খোন্দকার শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই জাতীয় শ্রমিক লীগের সম্মেলনে সভাপতি হয়েছিলেন শুক্কুর মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন সিরাজুল ইসলাম। সৌজন্যে : ঢাকাটাইমস