স্ত্রীকে ফাঁসাতে সন্তান অপহরণ : স্বামীকে এক মাসের কারাদণ্ড
তাহিরপুর ::প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের ছেলেকে অপহরণের অপরাধে পিতা আজিজুর রহমানকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আসামিকে কারাদণ্ড দেন তাহিরপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির হাসান পলাশ। সাজাপ্রাপ্ত আসামি উপজেলার বালিজুড়ী ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আজিজুর রহমান ওরফে হেকমত আলীর (৫৩) দুই স্ত্রী। তার বড় স্ত্রীর নাম জামিনা বেগম। তার ঘরে ছেলেমেয়ে পাঁচজন। দ্বিতীয় স্ত্রী লিপিয়া বেগমের সন্তান ৯ জন। এমন বড় সংসার নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন আজিজুর। দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকে। এ নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছে। এক স্ত্রীর মামলায় আজিজুর নিজেও আসামি। একপর্যায়ে ছোট স্ত্রীর পরামর্শে বড় স্ত্রীকে ফাঁসাতে নিজের ছেলেকে অপহরণের নাটক সাজান আজিজুর রহমান। পুলিশ জানায়, দুই স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটে। তারা একসঙ্গে থাকতে চান না। এক স্ত্রী আরেক স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। দুই স্ত্রী আর সন্তানদের ঝগড়া-বিবাদ সামলাতে না পেরে বড় স্ত্রীকে আলাদা বাড়িতে রাখেন আজিজুর। আর ছোট স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন তিনি। বড় স্ত্রী জামিনার করা মামলায় ছোট স্ত্রী লিপিয়ার ছেলে মনির মিয়া কারাগারে আছেন। তাই জামিনাকে শায়েস্তা করার চেষ্টায় ছিলেন লিপিয়া। এ ঘটনায় জামিনাকে হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে লিপিয়া তাঁর স্বামী আজিজুরকে দিয়ে ছেলে রিমন মিয়াকে (১০) অপহরণের নাটক সাজান। এরপর ৮ অক্টোবর আজিজুর বাদী হয়ে জামিনা বেগম ও তার ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধে রিমন মিয়াকে অপহরণের অভিযোগে তাহিরপুর থানায় মামলা করতে যান। এ বিষয়ে সন্দেহ হওয়ায় এতে বাদ সাধেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি ঘটনা শুনে তাহিরপুর থানার পুলিশকে মামলা নিতে নিষেধ করেন। এরপর রিমনকে উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দেন। পরে বুধবার পুলিশ রিমন মিয়াকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া রিমন বৃহ¯পতিবার সকালে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানকে জানায়, সে অপহৃত হয়নি। ভৈরবে তার খালার বাড়িতে ছিল। তাহিরপুর থেকে তার বাবা তাকে সুনামগঞ্জ শহরের এনে খালুর কাছে দেন। পরে তার খালু তাকে ভৈরবে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় আজিজুর রহমানকে আটক করতে তাহিরপুর থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। আটকের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনতাসির হাসান তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, আজিজুর রহমান কোনো কাজ করেন না। এলাকায় মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। অপহরণের মামলা নিলে আজিজুর নিচে বাঁচতে শিশুটির বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করে ফেলতে পারতেন। তাহিরপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান জানান, ছেলেকে নিয়ে অপহরণের নাটক সাজানোর অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে আজিজুরকে সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।