সিলেটে আ.লীগ-বিএনপিতে একই হাওয়া
রফিকুল ইসলাম কামাল :: দেশের রাজনীতিতে বড় দুই হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। ব্যতিক্রম নয় সিলেটেও। এ দুটি দলই সিলেটে রাজনীতির মাঠে দাঁপিয়ে বেড়ায়। বড় এ দুই দলের রাজনীতিতে এখন বইছে একই হাওয়া। এই হাওয়া সম্মেলনের। সিলেটে আওয়ামী লীগের উভয় শাখা তথা জেলা ও মহানগরে এবং বিএনপির জেলা শাখায় সম্মেলন ঘিরে চলছে ব্যাপক তোড়জোড়। তবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হলেও বিএনপি এখনও তারিখ নির্ধারণ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষিত হয়। পরদিন ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসে উভয় শাখায়। তিন বছর মেয়াদী এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। এরপর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষে আরো পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্মেলন হয়নি, নতুন কমিটিরও দেখা নেই।তবে সম্প্রতি কেন্দ্রের হুঁশিয়ারি পেয়ে সম্মেলন আয়োজনে জোর পদক্ষেপ নেন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বর্ধিত সভা করে ঠিক করা হয় সম্মেলনের তারিখ।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আগামী ৫ ডিসেম্বর হবে। এ শাখার আওতাধীন ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৭টিতে সম্মেলন হয়নি, বাকি ৬টিতে হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। জেলার সম্মেলনের আগে এসব শাখায় সম্মেলন এবং কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, শুক্রবার (১ নভেম্বর) বালাগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোতেও সম্মেলন হবে। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক জগলু চৌধুরী সিলেটভিউকে জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর সিলেট সদর উপজেলা, ৯ নভেম্বর দক্ষিণ সুরমা এবং ১০ নভেম্বর কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এসব উপজেলায় নতুন করে তারিখ নির্ধারণ করে সম্মেলন হবে। তিনি জানান, আগামী ৯ নভেম্বর কোম্পানীগঞ্জ, ১৩ নভেম্বর গোলাপগঞ্জ এবং ১৪ নভেম্বর বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। বাকি ৬টি উপজেলায় নভেম্বরের মধ্যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। এদিকে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ নভেম্বর। এ শাখার আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টিতে আগে সম্মেলন করা হয়নি। অক্টোবরের মধ্যে এসব শাখায় সম্মেলন শেষ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। গেল ২০ অক্টোবর ২নং ওয়ার্ড, ২২ অক্টোবর ৩নং ওয়াডর্, ২৪ অক্টোবর ১১নং ওয়ার্ড, ২৬ অক্টোবর ৭নং ওয়ার্ড, ২৮ অক্টোবর ২২নং ওয়ার্ড এবং ৩০ অক্টোবর ২৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হয়।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ সিলেটভিউকে বলেন, ‘সিলেটে আওয়ামী লীগ এখন সম্মেলনমুখী। সম্মেলন ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে দলের কার্যক্রম। মহানগরে যেসব ওয়ার্ডের সম্মেলন বাকি ছিল, আমরা তা শেষ করেছি। জেলা শাখা তাদের আওতাধীন ইউনিটের সম্মেলন শেষ করছে। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত, প্রাণবন্ত।’ এদিকে, সম্মেলনের হাওয়া লেগেছে সিলেট জেলা বিএনপিতে। জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিয়ে গেল ২ অক্টোবর আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এ আহবায়ক কমিটি তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করার কথা। এর আগে নিজেদের আওতাধীন সকল ইউনিটের সম্মেলন শেষ করবে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি। জানা গেছে, সিলেট জেলা বিএনপির আওতাধীন ১৩টি উপজেলা শাখা ও ৪টি পৌরসভা শাখার সকল কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এসব শাখায় নতুন করে সম্মেলন আয়োজন শেষে কমিটি দেবে জেলার আহবায়ক কমিটি। এরপর জেলা শাখার সম্মেলন আয়োজন করা হবে। এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, ‘আমাদের আওতাধীন সকল শাখায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি আসবে। এরপর আমরা জেলার সম্মেলন আয়োজন করবো।’ জানা গেছে, সিলেট মহানগর বিএনপিতে আগামী কিছুদিনের মধ্যে আহবায়ক কমিটি আসতে পারে। এ কমিটি গঠন করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাজ করছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। আহবায়ক কমিটি গঠনের পর এ শাখায়ও শুরু হবে সম্মেলনের তোড়জোড়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়। এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল।