মাধ্যমিকে ব্যর্থ হয়ে যেভাবে ক্রিকেটার হলেন নাঈম
ব্যক্তিগত কারণে ভারত সফরে নেই তামিম ইকবাল। তার জায়গায় কে খেলবেন, এ নিয়ে কম দৌড়ঝাঁপ কম করেনি বাংলাদেশ ক্রিকেটা বোর্ড (বিসিবি) নির্বাচকরা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, ঘরোয়া লিগ, এনসিএল কিংবা যুব দল নিয়ে একের পর এক বিচার-বিশ্লেষণ করে শেষমেশ পাওয়া গেল নাঈম শেখকে। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ধীরস্থির ব্যাটিং করে ২৬ রান যোগ করেন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। এরপর রাজকোটেও রান আসে তার ব্যাট থেকে। সেদিন আরেকটু ছাড়িয়ে যান। খেলেন ৩৬ রানের ইনিংস। সর্বশেষ তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে একাই ব্যাট চালিয়েছেন নাঈম। খেলেন ৮১ রানের ঝলমলে ইনিংস। সবমিলিয়ে ভারতের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। ৩ ম্যাচে মোট ১৪৩ রান করেছেন নাঈম। ব্যাটিং গড় ৪৭.৬৬। স্ট্রাইক রেট ১৩৩.৬৪। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বিশ্বের যেকোনও কন্ডিশনে চ্যালেঞ্জিং। বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ভারতে ক্রিকেটারদের শাণিত করে তোলে। আইপিএলে আটটি দল খেলে থাকে, যার মধ্যে প্রতি ম্যাচে একাদশে সাতজন ভারতীয় ক্রিকেটার আবশ্যকভাবেই প্রতিটি ম্যাচ খেলে থাকেন।
এ হিসেবে ভারতে টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক মানের একটি টুর্নামেন্টে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে ৫৬ জন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার খেলেন। এদের মধ্যে খেলেই সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে নিজেকে মেলে ধরলেন নাঈম। যদিও প্রথম দুই ম্যাচে ভালো শুরু করলেও, ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। কিন্তু সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকায় আর কোনও বাংলাদেশি ক্রিকেটার নেই। শ্রেয়াস আইয়ার ৩ ম্যাচে করেছেন ১০৮ রান। রোহিত শর্মা ৩ ম্যাচে করেছেন ৯৬ রান। শেখর ধাওয়ান সমান ম্যাচ খেলে তুলেছেন ৯১ রান। লোকেশ রাহুল করেছেন ৭৫ রান। ২০১৭-১৮ মৌসুমে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে ১২ ম্যাচে ৪৬.৩৩ গড় ও ৮২ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৫৫৬ রান। পরের আসরে সেই নাঈম শেখ ১৬ ম্যাচে ৩ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৮০৭ রান করেন ৫৩.৮০ গড় ও ৯৪.৩৮ স্ট্রাইক রেটে। তিনি চাইতেন, রানের খাতায় এগিয়ে থাকার চেয়ে ইনিংসে প্রভাব বিস্তার করে এমন ইনিংস খেলতে। চাইতেন ইমপেক্টফুল ক্রিকেটার হতে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হওয়ার কারণে নাঈমের বৈশিষ্ট্যই হলো একটু ধীরে শুরু করা। কিন্তু সত্যিকার অর্থে তার ব্যাটিংয়ের ধরণ আগ্রাসী। যার প্রমাণ অবশ্য তিনি দিয়েছেন শেষ ম্যাচে।
পরীক্ষায় ফেল করে ক্রিকেটে মনযোগ:
২০১৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে নাঈম শেখ যোগ দেন ফরিদপুরের একটি ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে। সেখান থেকেই তার ক্রিকেট যাত্রা শুরু। নাঈমের শৈশবের কোচ মোস্তফা বশির বলেন, ২০১২-১৩ সালের ঘটনা, তখন ফরিদপুরে যারা বল জোরে মারতে পারতো, তাদের মধ্যে নাঈম ছিল একজন। তখনও কোনও দলে ছিল না সে। পারিবারিক কারণেই খেলতে পারেনি। টেপ টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতো তখন। কোচ তার সাথে দেখা হওয়ার পর তাকে অনুশীলন করার পরামর্শ দেন। ২০১৭ সালে নারায়ণগঞ্জের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার পর ম্যান অফ দা সিরিজ হয় নাঈম। এরপর সে ডিভিশনাল দলে সুযোগ পায়। ২০১৬-১৭ সালে জেলা দলে খেলার সুযোগ পান। শুরুতে নাঈমের পরিবার পড়ালেখা করানোর প্রতি বেশি আগ্রহী ছিল, কিন্তু মাধ্যমিকে যখন ব্যর্থ হন নাঈম, এরপর আরও একাগ্রতার সাথে ক্রিকেটে মনোযোগী হন। ফরিদপুর জেলার হয়ে সর্বোচ্চ রান করার পর এক বছর আগে ঢাকা বিভাগের হয়ে খেলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। ২০১৬ সালে চ্যালেঞ্জ কাপে অংশ নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার পর সরাসরি সুযোগ আসে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডে যান বিশ্বকাপ খেলতে। ঘরোয়া লিগে টানা দুই মৌসুম ৫৫৬ ও ৮০৭ রান করার পর হাই-পারফরম্যান্স দলে ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলে সুযোগ পান নাঈম। আফগানদের বিপক্ষে ‘এ’ দলের সিরিজে শেষ ওয়ানডেতে খেলেন ১২৬ রানের ইনিংস। নাঈম শেখ ভারত সফরের আগেও ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ত্রিদেশিয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম পর্বের পর তাকে দলে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা। ত্রিদেশিয় সিরিজের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি টি-টোয়েন্টিতে বিসিবি একাদশের হয়ে ১৪ বলে ২৩ রান করেছিলেন নাঈম। সূত্র: বিবিসি বাংলা।