ইমরানের জীবনের শেষ সেলফি
কে জানতো এটাই ইমরানের জীবনের শেষ সেলফি। আর এ সেলফিই তার জীবনে যম হয়ে আসবে? সকালে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল ইমরান। ঘুরতে ঘুরতে রেল লাইনে সেলফি তুলতে যায় দুই বন্ধু। এ সময়ই হর্ন বাজিয়ে দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছিল আন্তঃনগর ট্রেন। যে পথ ধরে ছুটে আসছিল ট্রেন তার খুব কাছে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছিল তারা। মুঠোফোনে সেলফি ধারণ হয় ঠিকই, সেই সঙ্গে ছবি হয়ে যায় ইমরান হোসেন নামের ১৬ বছরের কিশোর। ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়েছে তার সহপাঠী আল রাফি। তাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।নিহত ইমরানের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফোন থেকেই দুর্ঘটনার আগে তোলা ছবি পাওয়া যায়। ছবিতে দেখা যায় দুই বন্ধু রেললাইনের উপরে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে। সর্বশেষ লাইন থেকে নেমে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তারা। এসময় পিছন থেকে একটি ট্রেন ধেয়ে আসে। ওই ট্রেনটিই তাদের ধাক্কা দেয়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় দুই শিক্ষার্থীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। দুপুরের দিকে চিকিৎসকরা ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলা কান্দাইল দক্ষিণ পাড়ার শাহ আলম দেওয়ানের ছেলে। আহত শিক্ষার্থীও ওই এলাকার বাসিন্দা। তারা দুজনেই নারায়ণগঞ্জের গোলা কান্দাইল মুজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। নিহত ইমরান হোসেনের চাচা মো. আল আমিন সাংবাদিকদের জানান, তার ভাতিজা সকালে স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তার বন্ধুদের মাধ্যমে খবর পান ইমরান ও তার এক বন্ধু দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা জানতে পারেন যে, ইমরান ও রাফিসহ পাঁচ বন্ধু একসঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিল। কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ট্রেন আসার সময় আল রাফি সেলফি তুলছিল, আর পেছনে দাঁড়িয়েছিল ইমরান। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় দুজন আহত হয়। পরে পথচারীরা দুইজনকে উদ্ধার করে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইমরানকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের বিমানবন্দর ফাঁড়ির এসআই মো. মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, সেলফি তুলতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় এক ছাত্র নিহত হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও রেল লাইনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। রেললাইনে বা লাইনের পাশে দাঁড়িয়ে চলন্ত ট্রেন সামনে রেখে সেলফি তোলা, ফেসবুক লাইভ দেয়ার মতো কাজ করে থাকে উঠতি বয়সীরা। অসতর্কতার কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে তারা দূর্ঘটনার শিকার হয়।