ভার্চুয়াল আদালতে সারা দেশে ৮ দিনে সাড়ে ১৮ হাজার জামিন
স্বল্প পরিসরে চালু হওয়া তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গঠিত ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনার মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। গত ১১ মে ভার্চুয়াল বেঞ্চের কার্যক্রম শুরু থেকে বুধবার (২০ মে) পর্যন্ত আট কার্যদিবসে উচ্চ আদালতসহ দেশের বিভিন্ন অধস্তন আদালত থেকে ১৮ হাজার ৭৩৫ আসামির জামিন হয়েছে। শুধু বুধবার সারা দেশের অধস্তন আদালতে ৪ হাজার ৪৬৯ জন আসামিকে জামিন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। এদিন হাইকোর্টেও একটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ থেকে ৩২ জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। ঈদের ছুটির পর আগামী ২৮ মে আদালতের কার্যক্রম চলবে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সময় সাধারণ ছুটি চলাকালে আদালতে স্বল্প পরিসরে বিচার কাজ অব্যাহত রাখতে ভার্চুয়াল কোর্ট গঠন করা হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে এর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে। তারা সুফল পাচ্ছে। আইনজীবীরা শুনানি করায় অনেক আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে। ফলে আদালতের সাফল্য বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ কল্পে শারীরিক উপস্থিতি ব্যাতিরেকে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত কল্পে সাধারণ ছুটির সময়ে ঢাকার আদালতে একাধিক ভার্চুয়াল কোর্ট গঠন করা হয়েছে। প্রথমদিকে আইনজীবীরা এই সিস্টেম রপ্ত করতে না পারলেও এখন অনেকটা আয়ত্তে চলে এসেছে। এখন মামলার জামিন আবেদনের নিষ্পত্তির পরিমাণ অনেক বাড়ছে।
গত ১০ মে অধস্তন (নিম্ন) আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানি করতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এছাড়া সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে একটি চেম্বার আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠন করা হয়। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন অধস্তন আদালতের ভার্চুয়াল বেঞ্চে জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ভার্চুয়াল আদালতের প্রথম দিনে (১১ মে) কুমিল্লার জেলা জজ আদালতে এক মামলায় একজনের জামিন হয়। পরদিন ১২ মে ১৪৪ জন, ১৩ মে এক হাজার ১৩ জন, ১৪ মে এক হাজার ৮২১ জন, ১৭ মে তিন হাজার ৪৪৭ জন, ১৮ মে তিন হাজার ৬৩৩ জন, ১৯ মে ৪ হাজার ৬৩ জন এবং ২০ মে ৪ হাজার ৪৮৪ আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে গত আট কার্যদিবসে উচ্চ আদালতসহ অধস্তন আদালত থেকে ১৮ হাজার ৭৩৫ জন কারাগারে থাকা হাজতিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে জামিন শুনানি অনেক বেড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার জন্য আদালত কর্তৃক ‘তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগত চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ৯ মে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর আইন মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করা হয়। দেশের এই ক্রান্তিকালে আইনজীবী, বিচারক, আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী তথা বিচারপ্রার্থী মানুষের কল্যাণে ডিজিটাল প্লাাটফর্ম ব্যবহার করে চলছে ভার্চ্যুয়াল আদালতের কার্যক্রম ।