জন্মদিনে দেহদানের কথা মনে করিয়ে দিলেন তসলিমা নাসরিন!
হিন্দুমতে চিতায় উঠবে না, ইসলাম মতে কবরেও যাবে না! এই অমূল্য দেহ কাজে লাগবে গবেষণায়। জন্মদিনে আরো একবার সেই দেহদানের কথা উল্লেখ করলেন বাংলাদেশের লেখক তসলিমা নাসরিন! মৃত্যুর পর তাঁর নশ্বর দেহ লাগানো হোক চিকিত্সা ব্যবস্থার গবেষণার কাজে, এমনটাই চান তিনি। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স বা এইমস-এ তিনি নিজের দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন। তাঁর অভিমান কলকাতাকে কেন্দ্র করে৷ বাংলাদেশের পর তিনি থাকতে চেয়েছিলেন কলকাতায়। কিন্তু তাঁকে সে সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। বাংলায় একজন লেখক থাকতে চেয়েছেন, বাঙালি লেখক, লিখবেন বাংলা ভাষায়। সমৃদ্ধ হবে সাহিত্য আরো বেশি। এছাড়াও বাংলার পরিবেশে লেখকের মানসিকতাও আরো বেশি সচল হবে লেখার জন্যে! না তিনি বিভিন্ন সময় রাজনীতির শিকার হয়েছেন। অথচ রাজনীতির ‘র’-ও তিনি জানেন না। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর দেহ যেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন তসলিমা নাসরিন৷ কিন্তু, জীবিত অবস্থায় তিনি আর কলকাতায় ফিরতে পারবেন কি না, সেই বিষয়টি নিয়ে এখন তাঁর মনে দেখা দিয়েছে সন্দেহ৷ কারণ রাজনীতির মারপ্যাঁচ শেষ হবার নয় বলেই মনে করেন একাংশ।
এর আগে ফেসবুকে তসলিমা নাসরিন জানিয়েছিলেন, যখন তিনি কলকাতায় ছিলেন, সেই সময় মর ণোত্তর দেহদানের বিষয়ে এক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর লেখাপড়া হয়ে গিয়েছিল৷ তাঁর মৃত্যুর পর, ওই সংগঠনের তরফে তাঁর দেহ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করার কথা ছিল৷ কিন্তু, শেষ পর্যন্ত ওই ব্যবস্থা সম্ভব হবে কি না, সেই বিষয়ে এখন সংশয়ে সন্দেহের মধ্যে আছেন তসলিমা নাসরিন৷ সেই জন্যেই হয়তো, এরপর আবারও ফেসবুকে তসলিমা নাসরিন লিখেছিলেন, ‘‘যেহেতু আমাকে কলকাতায় আর যেতে দেওয়া হয় না, সেহেতু সে আশায় জলাঞ্জলি দিতে হচ্ছে৷ যে শহর আমাকে জীবিত যেতে দিচ্ছে না, সে শহরে আমাকে মরলেও যেতে দেবে না৷ অথবা দিলেই বা যাবো কেন? আমার বুঝি অভিমান হয় না?’’ আরো বলেন, ‘‘মরণোত্তর দেহদানটা তাই এমনভাবে করছি যে, যে শহরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো, সেই শহরের হাসপাতালে দেহটা দেওয়া হবে৷ দিল্লিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে এইমসে৷ নিউইয়র্কে করলে বুথ মেমোরিয়াল বা বেলভিউয়ে৷ মেডিক্যাল রিসার্চের কাজে মৃতদেহের প্রয়োজন তো পড়েই৷’’তবে এই প্রথম নয়, এর আগে ২০০৫ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছিলেন তসলিমা নাসরিন।
মঙ্গলবার লেখকের ৫৮’তম জন্মদিনে সেকথা আরো একবার স্মরণ করে লিখেছেন, জন্মদিন টন্মদিন আমার পালন করতে ইচ্ছে করে না। হিসেব করে দেখলাম আমার এখন যে বয়স, সে বয়সে আমার মা মারা গিয়েছিলেন। এই বয়সে পোঁছোনোর আগে বুঝিনি, এখন বুঝি যে মা খুব অল্প বয়সে মারা গিয়েছিলেন। জন্মদিন আসা মানে কবরের দিকে আরও একটি বছর এগিয়ে যাওয়া। আমি তো মৃতদেহ দান করেছি হাসপাতালে, চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণার কাজে। সুতরাং আমার মৃতদেহ কবরে যাবে না, চিতায় উঠবে না, জলে ভাসবে না, কফিনে ঢুকবে না, আমার মৃতদেহ শুয়ে থাকবে হাসপাতালের শব ব্যবচ্ছেদ কক্ষে, অথবা ল্যাবে। এর চেয়ে ভালো সৎকার আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু মৃত্যুর কথা আমি ভাবতে চাই না। যেদিন চলে যেতে হবে, সেদিন চলে যাবো। কিন্তু শেষদিন পর্যন্ত যেন ভাবতে পারি, বলতে পারি, লিখতে পারি। যেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারি। সব নিষেধাজ্ঞাকে যেন উড়িয়ে দিতে পারি। শেষদিন পর্যন্ত। আজ কত মানুষ যে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠাচ্ছে আমাকে! দেখে মনে হয় এতকাল আদর্শের জন্য সংগ্রাম ক’রে শুধু কি নির্বাসন, ফতোয়া, প্রত্যাখ্যান, নিষেধাজ্ঞা, অবজ্ঞা, অপবাদ, উপেক্ষা, নিন্দা আর ঘৃণাই জুটেছে? ভালোবাসাও তো পেয়েছি অনেক। আমি এক ভালোবাসার সামনেই মাথা নোয়াই”। তসলিমা নাসরিন শতায়ু হোন, জন্মদিনে এই শুভেচ্ছা আরো একবার।