রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন অনুমোদন
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইনের বিরোধিতা করে আবারো নোট অব ডিসেন্ট দিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বুধবার (২৬ আগস্ট) কমিশন বৈঠকে তিনি নোট অব ডিসেন্ট দেন তিনি। নির্বাচন ভবনে নিজের দপ্তরে মাহবুব তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, সমঝোতার পথ খুঁজে পাচ্ছি না তাই বাধ্য হয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। ভিন্নমত অবশ্যই প্রকাশিত হতে হবে। ভিন্নমত যদি প্রকাশিত না হয় তাহলে সেটা ভিন্নমত হতে পারে না। আমি যতবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি, তা বাধ্য হয়েই দিয়েছি। আমি সমঝোতার কোনো পথ খুঁজে পাইনি। এখানে কিছু বিষয় রয়েছে যাতে কোনো সমঝোতা হয় না। আমি এখানে বলেছি আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তারপরেও আমার কথাটা তো কেউ মেনে নিচ্ছে না। যার রেকর্ড রাখার জন্য আমি নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি। সিইসির কাছে দেয়া নোট অব ডিসেন্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর ‘চ্যাপ্টার সিক্স এ’-এর বিভিন্ন আটিকেল কর্তন করে রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমি এই সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করি। আরপিও বা ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর অংশবিশেষ নিয়ে পৃথকভাবে আইন প্রণয়ন হটকারী সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেন, আমি পূর্বেও বলেছি, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’ একটি ঐতিহাসিক আইনগত দলিল, যা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার অনন্য স্মারক। নির্বাচন কমিশনের এই প্রস্তাব গৃহীত হলে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অঙ্গহানি ঘটবে, যাতে একে বিকলাঙ্গ মনে হবে। প্রস্তাবিত ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’-এর প্রারম্ভিক অংশে ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, প্রয়োগ ও প্রবর্তন ইত্যাদি পরিবর্তন বিষয়ে আমি একমত নই। এতে সজ্ঞা পরিবর্তন করে নতুন যে পদ-পদবি প্রস্তাব করা হয়েছে, তা আমার কাছে অনাবশ্যক মনে হয়, যোগ করেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলসমূহ ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত যে ৫০টি মতামত পাওয়া গেছে, তাতে এসব পদ-পদবি পরিবর্তনের বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। কী কারণে বা কোন যুক্তিতে এই পরিবর্তন প্রয়োজন, তা আমার বোধগম্য নয়। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ‘আরপিও, ৭২’-এর সংশোধন করা যেতে পারে, যা পূর্বেও করা হয়েছে। আমি মনে করি, আইনের পরিবর্তন আইন কমিশনের কাছে ন্যস্ত থাকাই সমীচীন।
মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, বুধবারের কমিশন বৈঠকে কার্যপত্রে বলা হয়েছে- নির্বাচন কমিশনের ৬৩তম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০’ এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়। এই আইন সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনায় নির্বাচন কমিশনে নানা রূপ মতদ্বৈধতা ছিল। আইনটি মতামত যাচাইয়ের পূর্বে অধিকতর যাচাই-বাছাই ও এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে আরো আলোচনার প্রয়োজন ছিল। দেশের অন্যতম বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দলও এই আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করেছে। বর্ণিত অবস্থায়, রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন, ২০২০ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে আমি নোট অব ডিসেন্ট প্রদান করছি। গত সোমবারও মাহবুব তালুকদার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন পরিচালনা আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দেন। কমিশন বৈঠকে বুধবার দল নিবন্ধন আইনের খসড়াটি অনুমোদন পেয়েছে। এ নিয়ে ইসি সচিব মো. আলমগীর জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ এর অনুমোদন দেয়া হয়। সংশোধনীগুলো সম্পন্ন হলে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
আইনটির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আধুনিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি ৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ছিল না। এটি ২০০৮ সালে আরপিওতে যুক্ত হয়েছে। তখন আলাদা আইনের কথা উঠেছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে তড়িঘড়ি করে এটিকে আরপিওতে যুক্ত করা হয়। বর্তমান কমিশন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়টি আলাদা করে আইন করার প্রয়োজন মনে করছেন। তারা মনে করছেন আইনের এই অংশটি আরপিও থেকে বের করে স্বতন্ত্র করা উচিত। তাছাড়া আপনারা জানেন, সরকারের একটি সিদ্ধান্ত আছে সব আইনগুলো বাংলায় প্রণয়ন করার। যার কারণে এটি বাংলায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পরিষদ দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধনের বিষয়টি আরপিওতে থাকলে তা কেবল সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য হয়। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকের জন্য আলাদা আইনের প্রয়োজন পড়বে। আরপিও থেকে নিবন্ধনের চ্যাপ্টারটি বের করে একটি স্বতন্ত্র আইন করা হলে কোন সমস্যা হবে না। ইসি সচিব বলেন, কমিশন আইনের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে কিছু সংযোজন-বিয়োজনের নির্দেশনাসহ এটি অনুমোদন দিয়েছে। আমরা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই সংযোজন-বিয়োজন সম্পন্ন করে কমিশনারদের কাছে উপস্থাপন করব। তারা এটি দেখার পর পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে।তিনি আরো বলেন, আমরা ১৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনসহ ৪১ প্রতিনিধির মতামত নিয়েছি। এটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কমিশন সভায় তুলে ধরা হয়েছে। মতামতগুলোর মধ্যে যেটি গ্রাহ্য সেটা কমিশন গ্রহণ করেছে। যেটি অগ্রাহ্য সেটি কমিশন গ্রহণ করেনি।