ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধানে আইনগত কোনও বিধি-নিষেধ নেই
বার্তা ডেস্ক: নাইকো মামলায় বাংলাদেশের বিজয়ের পর ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধানে নামার জোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ফেব্রুয়ারিতে নাইকো মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে রায় আসে। এরফলে ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালাতে আইনগত কোনও বিধি-নিষেধ নেই। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)-এর নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে ছাতক গ্যাসক্ষেত্রটি। বিস্ফোরণে এই গ্যাসক্ষেত্রের উপরের স্তরের গ্যাস পুড়ে গেলেও অন্য স্তরে গ্যাস রয়েছে। ফলে এখনই জরিপ করে গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়ন করা জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান, ভূতত্ত্ববিদ হোসেন মনসুর বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করার সময় আমরা বেশ কিছু টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন দিতাম সেগুলো যথাযথভাবে না করলে আমরা চুক্তি বাতিলও করতে পারি। সে হিসেবে ছাতক গ্যাসক্ষেত্রের কোনও কাজই করতে পারেনি নাইকো। আমরা নাইকোর করা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে জিতেও গেছি। আমাদের উচিত এখন চুক্তি বাতিল করে সেখানে যত দ্রুত সম্ভব খনন কাজ শুরু করা। বিস্ফোরণ ঘটেছিলো ছাতক ওয়েস্টের ক্ষেত্রটিতে। এখনও ছাতক ইস্ট ইনটেক থাকার কথা। অনুসন্ধান শুরু করলে আমরা ভালো পরিমাণ গ্যাস পাবো বলে আশা করছি।
১৯৫৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম ৭৫ লাইন কিলোমিটার সিসমিকা সার্ভে করে ছাতকে গ্যাসের সন্ধান পায়। এরপর ১৯৬০ সালে এখানে প্রথম কূপ খনন করা হয়। দুই হাজার ১৩৫ মাটির নিচ পর্যন্ত খনন করা হয়। এর মধ্যে এক হাজার ৯০ মিটার থেকে এক হাজার ৯৭৫ মিটারের মধ্যে নয়টি গ্যাসসমৃদ্ধ স্তরের সন্ধান মেলে। এ গ্যাস কাঠামোর মধ্যে একটি ফাটল রয়েছে। তাই এটি ছাতক পূর্ব ও ছাতক পশ্চিম নামে দুই ভাগে বিভক্ত। পরে ছাতক পশ্চিমকে ইজারা দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। পরবর্তীতে আবার গ্যাসক্ষেত্র দুটিকে একটিতে রূপান্তর করা হয়। বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমদ চিশতী বলেন, আমাদের খুব দ্রুত সেখানে অনুসন্ধান শুরু করা দরকার। এজন্য প্রথমেই ত্রিমাত্রিক জরিপ করতে হবে।ছাতক ওয়েস্টে প্রথমবার যখন গ্যাস তোলা শুরু হয় তখন সেখানে কূপের মাটি নিচের ১২০০ থেকে ১৬০০ মিটারের মধ্যে ৪টি জোনে গ্যাস পাওয়া যায়। গ্যাস উত্তোলনের এক পর্যায়ে এসে পানি আসতে শুরু করায় কূপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর নাইকো যখন আবার কূপ করতে যায় তখন ৬০০ মিটার যাবার পরপরই ব্লো আউটের ঘটনা ঘটে। এত শেলো এলাকায় থাকা গ্যাস বের হয় আসে। কিন্তু মাটির নিচে এখনও গ্যাস আছে এবং তা বেশ ভাল পরিমাণ আছে বলেই আমরা আশা করছি। আর সেখানে একটি ফল্ট আছে যা ওয়েস্টের চেয়ে ইস্টেরটা তিনগুণ বড়। তাই আমরা আশা করছি ইস্টে গ্যাস বেশ পাওয়া যাবে। দুইক্ষেত্রের মধ্যে ছাতক ওয়েস্টে এ হবে উন্নয়ন কূপ আর ইস্ট হবে অনুসন্ধান কূপ৷
গত ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি আদালত ইকসিড রায় ঘোষণা করেন। এটি বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে গত মার্চের প্রথম দিকে। সরকারের তরফ থেকে গত ১৪ মে সংবাদ সম্মেলন করে রায়ে বিজয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়নে নাইকোর সঙ্গে বাপেক্স চুক্তিবদ্ধ হয়। গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধান কূপ খননকালে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে মজুদ গ্যাস পুড়ে যাওয়ার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।