‘চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০, অবসর ৬৫ করা যেতে পারে’
বার্তা ডেস্ক :: দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে বলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ কিংবা ৪০ বছর করা যেতে পারে। এ ছাড়া অবসরের বয়সও ৬৫ করা যেতে পারে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ৪ সেপ্টেম্বর ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা জানতাম যারা দারিদ্রসীমার নিচে, অর্থাৎ কাজবিহীন তারা বেকার। করোনার আগে এই সংখ্যা ছিলো ২০ শতাংশ। করোনার কারণে অনেক মানুষের কাজ নেই। শহরে যারা দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করতেন, তারা কর্মহীন হয়ে গেছেন। সিপিডি ও পিআরআইসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার হিসেবে এটা ৩৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। এখন তো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে। ফলে এখন আর ৩৫ নেই, আবার ২০ ভাগেও আসেনি৷ আমার মনে হয়, এটা ২২ থেকে ২৫ শতাংশ হবে। এখনো কোন পরিসংখ্যান হয়নি। যেহেতু পরিসংখ্যান ব্যুরো আমার আওতায় আছে তাই খুব শিগগিরই আমরা একটা হিসাবের কাজে হাত দেবো।
মন্ত্রী বলেন, সরকারের কোনো ভাবনা আমি বলতে পারবো না। আমার জানা মতে মন্ত্রিসভায় এমন কোনো কাগজ উপস্থাপিত হয়নি। বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, আমার জানা মতে সেটা সেই অবস্থাতেই আছে। এম এ মান্নান বলেন, গড় আয়ু বাড়লে যেটা হয়, অবসরের পরও কাজ করার সামর্থ্য থাকে। আগে এক সময় অবসরের বয়স ছিলো ৫৬, এখন সেটা ৬০ করা হয়েছে। গড় আয়ু তখন ছিলো ৫৫-৫৬, এখন ৭২ বছর প্রায়। এই যে বাড়তি ১৫ বছর, মানুষ তো কিছু করে খেতে চায়। এখন কিন্তু মানুষের দৈহিক ক্ষমতাও বেড়েছে। এখন মানুষ ভালো খায় আগের তুলনায়। গড় আয়ু বাড়ায় আমাদের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। ফলে এটা আমাদের বেকারত্বের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাও এক ধরনের বেকারত্ব৷ অবসরে যাওয়ার পরও এখন মানুষ কাজ খোঁজে। তারা কিন্তু অভিজ্ঞ, কাজ করে খেতে চায়। বর্তমান চিত্রটা কিন্তু এমনই।
তিনি বলেন, আমি আমার চিন্তার কথা বলতে পারি। কারণ সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অর্থনৈতিক বিষয়, সামাজিক বিষয় চিন্তা করতে হয়। উন্নত দেশে আমাদের মতো ক্যাডার, বয়স বা নিয়মকানুন নেই। আমাদের এখানে ব্রিটিশরা যে মানষিকতা থেকে এটা করেছিল, এখন সেটা আর খাটে না। আমাদের বয়স বেড়েছে, স্বাধীনতা বেড়েছে, সক্ষমতা বেড়েছে, বিদ্যাবুদ্ধি বেড়েছে, সুতারাং এটার পুনর্বিন্যান প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমার ব্যক্তিগত মত, চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩৫-৪০ করা যেতে পারে। আবার অবসরের বয়সও ৬৫ করে একটা পুনর্বিন্যাসের সময় এসেছে। অনেক চাকরিতে কিন্তু এটা আছে। এটা নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি। মন্ত্রী বলেন, পশ্চিমা যারা উন্নত তাদের ওখানে এটা নেই। আমরা এখনো ওই পর্যায়ে উন্নত হয়নি। কোন বাধা না থাকা সেটা হয়তো আমাদের জন্য একটু বেশি উদার হয়ে যাবে। তবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে একটু বাড়ানো উচিৎ বলে আমি মনে করি। যদিও এটা সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
তিনি বলেন, চাকরিতে ঢোকার বয়স বাড়ালে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাবে। এখন কারো বয়স ৩০ পার হলে তিনি সরকারি চাকরি থেকে ছিটকে পড়েন। এখন বয়স বাড়ালে আরো বহু নতুন মুখ সরকারি চাকরিতে আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে। অবসরের বয়স বাড়ালে নিচের দিকে বয়স না বাড়ালে একটা অসম ক্ষেত্র তৈরি হয়ে যাবে। আর যদি উপরের দিকে বাড়িয়ে নিচের দিকেও বাড়াই তাহলে একটা ব্যালেন্স হবে। তবে আবারো বলি, এটা বিশেষজ্ঞদর অনেক চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমি বিশেষজ্ঞ নই, তবে এটুকু বুঝতে পারি নতুন একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, চাপও বাড়বে সেটা মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম