সিনহা হত্যা: ১৩ দফা সুপারিশ তদন্ত কমিটির
বার্তা ডেক্সঃঃসেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গতকাল দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও সরকারের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় তার সঙ্গে ছিলেন কমিটির সদস্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এস এম সাজ্জাদ হোসেন। ৮০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তিও জমা দেয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬৮ জনের বক্তব্য শুনে যে প্রতিবেদন তারা তৈরি করেছেন তার আকার দাঁড়িয়েছে ৮০ পৃষ্ঠা। তার সঙ্গে ফটো অ্যালবাম আছে, বিভিন্ন চিঠিপত্র ও কাগজপত্র যুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রতিবেদনের ১৩টি সুপারিশ করেছে এ কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার নিহতের ঘটনা তদন্তে যে কমিটি করা হয়েছে, সে কমিটি আমাদের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে। তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশ করেছেন। সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, রিপোর্টের ভেতরে কী- আছে আমরা এখনো দেখিনি। এখন আমাদের সচিব এটা বিশ্লেষণ করে দেখবেন। আপনারা জানেন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি তদন্ত চলছে। সেজন্য আমরা প্রকাশ্যে কিছু জানাতে পারবো না। আমরা আদালতকে জানিয়ে দেবো এ বিষয়ে। আদালত মনে করলে আমাদের কাছ থেকে অফিসিয়ালটি নিয়ে যাবেন। এটা আদালতের এখতিয়ার। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কমিটিকে কিছু গাইডলাইন দিয়েছি। হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ আমরা বাস্তবায়ন করবো। তিনি আরো জানান, মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা চাই, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চমৎকার পরিবেশ ও সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনার পর দুই বাহিনীর প্রধান একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুলিশের ভূমিকাকে ম্লান করবে না বলে মন্তব্য করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর তিনি এ মন্তব্য করেন। তদন্ত কমিটি প্রধান বলেন, আমরা চারজন কমিটির সদস্য এক মাসের বেশি সময় ধরে আমরা যে কাজটি করেছি, যে রিপোর্টটি প্রণয়ন করেছি, সেটি হস্তান্তর করতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমি একটি কথা বলবো, আমাদের পুলিশ বাহিনী যে আইনশৃঙ্খলার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে, এই ঘটনাটি (সিনহা হত্যা) কোনোভাবেই তাদের ভূমিকাকে ম্লান করবে না। আমরা দেখেছি তারা পরিশ্রম করে। মিজানুর রহমান বলেন, আমরা চেয়েছি আমাদের মন্ত্রণালয় যেটি নির্দেশনা দিয়েছে, এটির উৎস কী, কারণ কী, এই ধরনের ঘটনার প্রতিকারের ব্যাপারে কী ধরনের সুপারিশ করা যায়, সেই ব্যাপারে আমরা চারজন পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করেছি।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে উদ্দেশ্য করে কমিটির প্রধান বলেন, আমরা স্যার আপনার সদয় অবগতির জন্য বলবো, কর্মপরিকল্পনায় আমরা নির্ধারণ করেছি কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ রকম একটা সম্ভাব্য তালিকা করেছি। এটি ইনক্রিমেন্টাল ছিল, শেষ পর্যন্ত ৬৮ জনে এটি দাঁড়িয়েছে। এই ৬৮ জনকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছি। এ ছাড়া আমরা ঘটনাস্থলগুলোতে রাত ৯টার দিকেও গিয়েছি। সাংবাদিক বন্ধুরা আমাদের সবসময় পাহারা দিয়েছেন, কিন্তু, ওনারা আমাদের ধরতে পারেননি। তিনি বলেন, আমরা রাতে এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) ফোর্স নিয়ে ডেমো করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। যে পাহাড়ে সিনহা গিয়েছেন সেই পাহাড়ে গিয়েছি। ওখানকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে উৎস, কারণ ও আমাদের সুপারিশ প্রণয়ন করেছি। মন্ত্রণালয় যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছিল, অর্থাৎ ঘটনার উৎস, কারণ এবং এ ধরনের ঘটনার প্রতিকারের ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে সুপারিশ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১শে জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার- টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনা প্রকাশের পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে ঘটনার উৎস, কারণ ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে সেই বিষয়ে সুপারিশ দিতে ২রা আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে। সাত কর্মদিবস অর্থাৎ ১০ আগস্টের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩শে আগস্ট পর্যন্ত। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় ফের ৩১শে আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময়ের মধ্যে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২রা সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করে।