বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তানিয়ার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার গল্প
বার্তা ডেক্সঃঃমধ্যপ্রাচ্যের আলোচিত জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একজন নেতার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তানিয়া জয়ার। সিরিয়ায় এক ভয়ানক জীবনের অভিজ্ঞতা শেষে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন তিনি। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে লেখা এক নিবন্ধে সেই অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছেন জয়া।উত্তর লন্ডনে এক বাংলাদেশি পরিবারে ১৯৮৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন তানিয়া জয়া। তিনি লিখেছেন, ছোটবেলা থেকেই আমি একজন ইংরেজ হয়ে উঠতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমার পরিবার চেয়েছিল আমি একজন ভালো মুসলিম নারী হই। ১৭ বছর বয়সে আমরা পূর্ব লন্ডনে চলে যাই। এক ‘কাজিন’ সে সময় আমার ওপর খুব বেশি প্রভাব ফেলেছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে কট্টর ধর্মীয় বিশ্বাসে জড়িয়ে পড়েছিল ।২০০৩ সালে লন্ডনে ইরাক যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের সময় কিছু লোক মুসলিম ডেটিং ওয়েবসাইটের নাম লেখা একটি কাগজের টুকরো দেয়। ঐ ওয়েবসাইটেই জন জর্জেলাসের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। জন একজন মার্কিন নাগরিক, যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। তাকে খুব স্মার্ট বলে মনে হয়েছিল। জীবনসঙ্গী হিসেবে এ রকম একজনকেই আমি খুঁজছিলাম। জনের প্রথম লন্ডন সফরেই তাকে বিয়ে করি। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাই। আমাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কিছুদিনের মধ্যেই জন কট্টর আচরণ শুরু করে। ২০০৬ সালে ইসরায়েলপন্থি লবিং গ্রুপের ওয়েবসাইট হ্যাক করার অভিযোগে তার তিন বছরের সাজা হয়।
কারাগার থেকে জন প্রবেশনে বের হওয়ার পর তিন সন্তানসহ আমরা কিছুদিনের জন্য মিশর ও পরে ইস্তাম্বুলে যাই। জন তখন সিরিয়ায় যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু তিন সন্তান নিয়ে আমি যুদ্ধাঞ্চলে যেতে চাইনি। জন আমাদের তুরস্কের আন্তকায় নেওয়ার কথা বলে সরাসরি সিরিয়ার সীমান্তে নিয়ে যায়। তানিয়া লিখেছেন, সিরিয়ায় যাওয়ার পর ফোনে আমি জনের মাকে সব জানাই এবং এফবিআইয়ের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। এফবিআই থেকে জানানো হয়, স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরলে আমার বিরুদ্ধে চরমপন্থি সংগঠনে যোগ দেওয়ার অভিযোগ আনা হবে না। তানিয়া বলেন, সিরিয়ায় পানির কল থেকে কোনো পানি পাওয়া যেত না। কারণ বাসার ওপরে থাকা পানির ট্যাংকটিতে গুলি চালানো হয়েছিল। আমি ও আমার সন্তানেরা পুষ্টিহীনতায় ভুগছিলাম। আমি সারাক্ষণ সন্তান হারানোর ভয়ে থাকতাম। জনের ওপর ক্ষোভ থেকে নিজের মুখ ঢাকতে অস্বীকার করি। এজন্য জন বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। বন্ধুদের চাপে সে আমাদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। আমরা কয়েক মাইল হেঁটে, কাঁটাতারে ঘেরা গর্ত পেরিয়ে স্নাইপারের গুলির মুখে ট্রাকে উঠি। একজন তুর্কি আমাদের সাহায্য করে।
আমি বেঁচে ফিরতে পারায় কৃতজ্ঞ। আমি চেয়েছিলাম আমার সন্তানেরা ভালো জীবন কাটাবে, সুস্থ পৃথিবীতে ফিরে আসবে। ইসলামি স্টেটের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন জন। পাশ্চাত্যের অনেককে আইএসে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা ছিল তার। ২০১৭ সালে মার্কিন বোমা হামলায় তিনি মারা যান। তানিয়া জানান, তিনি এখন টেক্সাসে বসবাস করছেন। জনের বাবা-মা তার বাসার খুব কাছেই থাকেন। তার বর্তমান স্বামী তানিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্বশীল। তানিয়া বলেন, চরমপন্থা থেকে দূরে থাকার মূল চাবিকাঠি হলো শিক্ষা। শান্তিতে থাকার জন্য আমাদের প্রত্যেককেই অন্যের প্রতি, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।