সিলেটে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ৩ : ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি!
সূত্র জানায়, সিলেটে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের সঙ্গে দুটি কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন ‘ডাকাত সর্দারর’ এবং একজন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ বলে দাবি করেছে পুলিশ ও র্যাব। গত শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত তিনটার দিকে বিশ্বনাথ উপজেলার মরমপুর সুড়িখাল এলাকা এবং গোলাপগঞ্জের কদুপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিশ্বনাথ থানাধীন মরমপুর সুড়ির খাল এলাকার সিলেট-বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়কে ডাকাত দলের উপস্থিতির তথ্য পেয়ে অভিযান চালায় বিশ্বনাথ পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতেরা গুলি চালায়। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালালে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ফটিক ওরফে লিটন নামের একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত লিটন বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের নওধার (পূর্বপাড়া) গ্রামের মৃত ইদ্রিছ আলীর ছেলে। ওই সময়ে সিলেটের বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, নিহত ডাকাত সর্দার লিটনের বিরুদ্ধে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, অস্ত্র, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮ মামলা রয়েছে। এসময় ডাকাত দলের হামলায় তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ডাকাত দলকে লক্ষ্য করে পুলিশ ১৫টি গুলি ছোঁড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় পাইপগান, ৩ রাউন্ড গুলি ও করাত উদ্ধার করেছে।
র্যাব জানায়, শুক্রবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ কদুপুর এলাকায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি ও ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ আলী হোসেনকে (৪০) গ্রেফতার করেত অভিযান চালায় র্যাব-৯ এর একটি দল। এ সময় র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় সন্ত্রাসী বাহিনী। র্যাবের সদস্যরা পাল্টা গুলি ছুড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আলী হোসেনের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে র্যাব। ওই সময়ে র্যাব জানায়, আলী হোসেন ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালালে র্যাব সদস্যের ওপর গুলি চালানো হয়। পরে আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি চলায়। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ বলেন, এই পর্যন্ত যতগুলো বন্দুযুদ্ধ হয়েছে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাজানো নাটক ছাড়া আর কিছু নয়। কথিত বন্দুযুদ্ধে শিরা শিকদার হত্যার মধ্যে দিয়ে এর সূচনা হয়। অপরাধী অপরাধ করলে তার শাস্তির জন্য দেশে প্রচলিত আইন আছে। আইন মোতাবেক তার শাস্তি হবে। আইন থাকার পরেও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, অনেকগুলো বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য এক পুলিশকে সম্মননাও দেয়া হয়েছে। এখন সেইসব বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে মানুষ মুখ খুলেতে শুরু করেছে। তলের বিড়ালও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এসব ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও বেশী সচেতন হতে হবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও সচেতন হতে হবে।
অপরদিকে, ঈদুল আজহার ছুটি চলাকালীন গত ২ আগস্ট সিলেটের জকিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন আবদুল মান্নান ওরফে মুন্না (৩৫)। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, মুন্নাকে সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে ক্রসফায়ারে দেওয়া হয়েছে। নিহত মুন্নার বাড়ি জকিগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের খাদিমান গ্রামে। জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর আবদুন নাসের জানিয়েছিলেন, মুন্নার নামে মাদক চোরাচালান, অস্ত্র, ডাকাতির প্রস্তুতি, বিস্ফোরকসহ ১২ মামলা রয়েছে।গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় ২ আগস্ট বিকালে পুলিশ মুন্নাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানান, তার বসতঘরে ইয়াবা ও অস্ত্র রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে রাতে পুলিশ তাকে নিয়ে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে যাওয়ার পথে অজরগ্রামে পৌঁছলে মুন্নার সঙ্গীরা পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তখন পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এর পর আহতাবস্থায় মুন্নাকে উদ্ধার করে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মাদককারবারিদের গুলিতে সাত পুলিশও আহত হন বলে দাবি করেন ওসি। ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান, ৫ রাউন্ড গুলি, ৬টি ধারালো দা ও ৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান (গণমাধ্যম) জানান, পুলিশ আসামীদেরকে যখন ধরতে যায় তখন আসামীরা পুলিশের উপর আক্রমণ করে। এমনকি তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও ছোঁড়ে। তখন পুলিশ আত্মরক্ষার্তে পাল্টা গুলি ছোঁড়লে আসামীরা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালেও নিয়ে যায়। পুলিশ সবসমই চায় আসামীকে গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য।