বহুমুখী জ্ঞান বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি
বার্তা ডেক্সঃঃ শিশুদের অধিকার ও প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২০ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধান অতিথি হিসেবে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের আমরা এমনভাবে তৈরি করে দিয়ে যাবো, এই বিশ্বকে এমনভাবে তৈরি করতে চাই, যেন আমাদের শিশুরা সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, চলতে পারে, উন্নত জীবন পেতে পারে, সুন্দর জীবন পেতে পারে। নিরাপদ জীবন পেতে পারে, আর শিক্ষায় এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমরা স্কুল খুলতে পারছি না। তাই বাচ্চাদের প্রতিদিন বাসার কাছাকাছি কোনো স্থানে বা পার্কে এক ঘণ্টার জন্য হলেও নিয়ে যাবেন। ছোটাছুটি করা, খেলাধুলাগুলো যেন তারা করতে পারে, সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া দরকার।
তিনি বলেন, জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে- সেটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যৌথ পরিবারের শিশুদের খুব একটা কষ্ট হয় না। কারণ নিজের আত্মীয়-স্বজন, সমবয়সীদের পাওয়া যায়। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলাধুলা, খুনসুটি করা যায়। তাদের একটা সুন্দর পরিবেশ থাকে, কথা বলার একটা সুযোগ পায়। কিন্তু যেখানে একা পরিবার, একা শিশু বা মাত্র একভাই বা দুই ভাই-বোন, এরকম ছোট্ট পরিবারের জন্য ব্যাপারটি সত্যিই খুব কষ্টকর। তারা কি করবে? সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের কাছাকাছি কোনো পার্কে অন্তত এক ঘণ্টার জন্য হলেও একটু নিয়ে যাবেন। ছোটাছুটি করা, খেলাধুলাগুলো যেন তারা করতে পারে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া দরকার বলে আমি মনে করি। শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য, তাদের মানসিক অবস্থার জন্য সবদিক থেকে এটা খুবই দরকার, তারা যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই চলতে পারে। বাচ্চাদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করা, তাদের একটু খোলা বাতাসে নিয়ে যাওয়া বা রোদে খেলতে দেয়া এটা করোনাভাইরাসের জন্য সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি বাবা মা এ বিষয়টি একটু দেখবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের শিক্ষা যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করে দিয়েছি। প্রযুক্তি ব্যবহার করেই শিশুদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। শিশুদের লেখাপড়া যেন নষ্ট না হয়, সেটা যেন চালু থাকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। লেখাপড়া, খেলাধুলা বা শরীর চর্চা শিশুদের জন্য খুবই দরকার। সেগুলোর যেন ব্যবস্থা থাকে, পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে। কারণ শিক্ষা ছাড়া তো আসলে কখনই একটা দেশকে কিছু দেয়া যায় না। তিনি বলেন, আমরা কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন ছোট বয়স থেকে তাদের ভেতরে কিছু সৃষ্টির ক্ষমতা তৈরি করতে পারে, সেটা বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া, সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলা সব ধরনের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেকটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি, যাতে সেখানে শিশু থেকে শুরু করে সকল শিক্ষার্থী খেলাধুলা করতে পারে- সেই সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতনের কোনো কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গেই যেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিশুরা নিরাপদ থাকবে, সুন্দরভাবে বাঁচবে, মানুষের মতো মানুষ হবে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের শিশুদের মধ্যেই তো কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, বিজ্ঞানী হবে, ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে। আমরা সে ধরনের বহুমুখী জ্ঞান বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি। যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হয়। ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হবে, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হবে। তিনি বলেন, কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার। এ সময় ১৫ই আগস্ট কালরাত্রিতে নিহত পরিবারের সদস্য ও শিশুদের হারানো কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার ছোটভাই ছিল মাত্র ১০ বছরের একটি শিশু। ঘাতকের দল তাকেও ছাড়েনি। সেই সঙ্গে আরো কয়েকজন শিশুকে তারা হত্যা করে। আমার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে ছোট শিশু সুকান্ত তাকে হত্যা করেছে। আমার ফুফাতো ভাই ১০ বছরের আরিফ, রাসেলের খেলার সাথী তাকে হত্যা করেছে। আমাদের বাড়িতে কাজ করতো পোটকা এবং পোটকার মা, ছোট্ট বাচ্চা ছেলে মাত্র ৫-৬ বছর বয়স। তাকেও খুনিরা ছাড়েনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে দেখি নানা ধরনের সংঘাত। যখন দেখি কোনো শিশুর অকাল মৃত্যু সেটা সত্যি আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। সেটা আমার দেশেই হোক বা বিদেশেই হোক, বঙ্গোপসাগরেই হোক, ভূমধ্যসাগরের পাড়েই হোক প্রতিটি ঘটনাই আমাদের নাড়া দেয়। কিন্তু আমরা চাই, শিশুদের জন্য এ পৃথিবীটা একটা নির্ভরযোগ্য, শান্তিপূর্ণ বাসযোগ্য স্থান হোক। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর শিশুদের আঁকা নির্বাচিত ছবি নিয়ে ‘আমরা এঁকেছি ১০০ মুজিব’ এবং নির্বাচিত লেখা নিয়ে ‘আমরা লিখেছি ১০০ মুজিব’সহ শিশুদের লেখা বইয়ের (২৫টি বইয়ের সিরিজ) মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের পরিবেশিত বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা এমপি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ভীরা মেন্ডনকা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী এনাম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। শিশুদের পক্ষে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী নাবিদ রহমান তুর্য এবং হৃদিকা নূর সিদ্দিক। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সিটি করপোরেশন, ইউনিসেফ, সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল, অপরাজেয় বাংলা ও শিশু অধিকার ফোরামের পাশাপাশি অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সপ্তাহব্যাপী শিশু সপ্তাহ-২০২০ উপলক্ষে বিস্তৃত কর্মসূচি পালন করেছে, যা ১১ই অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। দিবসটি উপলক্ষে ইতিমধ্যে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার, ফেস্টুন, ব্যানার এবং স্যুভেনির প্রকাশিত হয়েছে।