এম.এ রাজ্জাক ::  তাহিরপুরে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আধারে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করছে একটি সংঘবদ্ধ বালু খেকো চক্র। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় নদীর পাড়ের গ্রামবাসীরা তাদের নাম পরিচয় বলতেও সাহস পাচ্ছেনা।  মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসন থেকে রাতের আধারে অভিযান চালিয়ে দুই একটি নৌকা আটক করলেও অধরা থেকে যাচ্ছে বালু খেকো মুল হোতারা। মূল হুতাদের দাঁড়িয়ে থেকে নদীর তীর থেকে বালু উত্তোলন করতে হয় না। নৌকার মাঝি ও শ্রমিকরাই তাদের হয়ে বালু উত্তোলন করে নৌকায় বালু ভর্তি করে থাকে। মুল হুতাদের কাজ হলো পুলিশ প্রশাসন নৌকা ও মাঝিদের আটক করলে সে বিষয়টি তদারকি করা। ফলে নদীতে মাঝে মধ্যে দুই একদিন বালু-পাথর উত্তোল বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে তারা আবারও অদৃশ্যের ইশারায় সক্রিয় হয়ে উঠে।

গত সোমবার সারাদিন যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী এলাকায় তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন মাইকিং করে নদীর বালি পাথর উত্তোলন ও পরিহবন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নিষেধাজ্ঞার ১২ঘন্টা না যেতে না যেতেই রাতের আধারে নদীর কয়েকটি স্থানে আবার তীর কেটে বালু উত্তোলন শুরু করে চক্রটি। পরে সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন রাতেই যাদুকাটা নদীতে অভিযান চালিয়ে একটি ছোট বালু ভর্তি স্টিল বডি নৌকাসহ একজন মাঝিকে আটক করে। স্থানীয় পুলিশ ও পাতি নেতাদের ম্যানেজ করেই রাতের আধারে নদীতে চক্রটি বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতে ও দিনে নদীর তীর কেটে পরিবেশ ধ্বংসের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলার ঘাঘটিয়া, ঘাঘরা, লাউড়েড় গড়, বিন্নাকুলী, মুদেরগাও, মিয়ারচর ও সোহালা গ্রামের ক্ষতিপয় সংজ্ঞবদ্ধ একটি বালুখেকো চক্র। এই চক্রটি নদীর তীর কেটে ও কোয়ারীর নাম করে জমি থেকে বালু ও পাথর উত্তোল করে দেদারছে বিক্রি করছে। ফলে, যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী ফাজিলপুর থেকে লাউড়েরগড় এলাকা পর্যন্ত লাউড়েরগড়, ছড়ারপাড়, ডালারপাড়, গাঘটিয়ার বড়টেক বিন্নাকুলি, কাইলকাপুর. মোদেরগাঁও, গরকাটি, গাঘড়া, পাঠনপাড়া, কুনাটছড়া ও সোহালা গ্রামসহ নদীর পূর্ব পাড়ের মিয়ারছড়, সত্যিস, আমড়িয়া, সিরাজপুর, বাগগাঁও মনবেঘ  সহ প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে হাজারো একর ফসলী জমি। ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে লাউড়ের গড়ের একটি বিশাল গোচরন ভূমি, কবরস্থান, নোয়াহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, অদ্বৈত প্রভূর আশ্রম, আনোয়ারপুর বাজার, বিন্নাকুলি বাজার, ফাজিলপুর বাজার।

নদীর পাড়ের গ্রামবাসীরা জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ও পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতের আধারে শতাধিক ষ্টিলবডি নৌকা দিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ের শিমুল বাগান, ভাঙ্গার খাল, বড়টেক পাক্কা রাস্তার মাথা, আদর্শ গ্রাম সরকারি পুকুর পাড়, জালর টেক, শিয়ালের টেক, বড়ই গ্রাছের পাড়সহ কয়েকটি স্পট দিয়ে নদীর তীরকেটে বালু-পাথর উত্তোলন করছে চক্রটি। আর এসব সম্পটে বালু উত্তোলনে নেতেৃত্ব দিচ্ছেন, ঘাগটিয়া আদর্শ গ্রামের তীর কাটার মামলার আসামী নুরুজ আলী, খাইরুল আমিন, আলিম উদ্দিন, রানু মিয়া, সামছু মিয়া, তার সহযোগী সাইফু উদ্দিন, দীন ইসলাম, তাজুল ইসলাম ওরপে মড়ল, সামসু আলম, তার সহোদর মুস আলম, নুর জামাল, জাহাঙ্গীর, আব্দুল্লাহ, তার সহোদর আব্দুল হান্নান, আল আমিন, রাহাজ উদ্দিন, ইরফান, আলমগীর, সাহাব উদ্দিন, হবিবুর। অপরদিকে নদীর পূর্ব পাড়ের লাউড়েরগর খেয়া ঘাটের দক্ষিণে ডালার পার, জামালের ছড়, লামাশ্রম ও বিন্নাকুলী এলাকায় কোয়ারী করে  বালু পাথর উত্তোলণ করে বিক্রি করছে নয়ন মিয়া (৪৫), সুমন মিয়া (৩৫), জামাল মিয়া (৪৮) সহ বেশ কয়েকজন।

বাদাঘাট বাজার বনিক সমিতির সভাপতি সেলিম হায়দার বলেন, যাদুকাটা নদীতে দিনে হাজারো শ্রমিক কাজ করে সংসার চালাতো। নদীর মাঝখনে বালু পাথর উরত্তালনের কাজ বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে চলছে নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন। বাদাঘাট ইউনয়িন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন বলেন, রাতের আধারে তীর কেটে বালু বিক্রির বিষয়ে আমি তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করেছি। সরকারী ভাবে বন্ধের নির্দেষ রয়েছে, যারা আইন অমান্য করে রাতের আধারে বালু বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবাবস্থা গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি। তাহিরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, আমরা গত সোমবার রাতেও একটি নৌকা আটক করেছি, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।  তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমরা অভিযানে যাই। কিন্তু অভিযানে গিয়ে ঘটনাস্থলে তাদের পাই না। কিভাবে যে তারা খবর পায় তা আমরা বুঝতে পারছিনা। এ বিষয়ে আমরা আরো কঠোর হবো।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn