সুনামগঞ্জকে দূর্গত এলাকা ঘোষনার দাবীতে মানবাধিকার কমিশনের মানববন্ধন
ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জকে দূর্গত এলাকা ঘোষনা এবং পাউবো কর্মকর্তা,পিআইসি ও ঠিকাদারদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়ে সুনামগঞ্জে মানববন্ধন হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টায় স্থানীয় ট্রাফিক পয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্যা ফৌজিআরা বেগম শাম্মীর সভাপতিত্বে এবং সদর উপজেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম পলাশের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে কমিশনের সুনামগঞ্জ পৌরসভা শাখা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা শাখাসহ বিভিন্ন সংগঠনভূক্ত উন্নয়নকর্মী ও শ্রেনীপেশার লোকজন অংশ নেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন কমিশনের উপদেষ্টা ড.মফচ্ছির মিয়া এডভোকেট,সুনামগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মোঃ মনির উদ্দিন, কমিশনের সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদির শান্তি মিয়া,কমিশনের সাবেক সেক্রেটারী দৈনিক সুনামকন্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায়,কমিশনের বর্তমান সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক আল-হেলাল,সুনামগঞ্জের সময় পত্রিকার সম্পাদক সেলিম আহমেদ তালুকদার,বার্তা সম্পাদক জসিম উদ্দিন, কৃষক নেতা আব্দুল কাইয়্যুম,হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য-সচিব সাংবাদিক বিন্দু তালুকদার, কমিশনের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম, পৌর কমিটির সভাপতি জাকারিয়া জামান তানভীর,উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর রহমান প্রমুখ। এছাড়াও ২ ঘন্টাব্যপী মানববন্ধনে কমিশনের জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুল,রেজাউল করিম চৌধুরী,সাবেক কাউন্সিলর শামীম চৌধুরী সামু, মোঃ মফিজুল হক, গীতিকার শেখ এমএ ওয়ারিশ আলী,বীর মুক্তিযোদ্ধা রৌজ আলী,জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অরুন তালুকদার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বাউল শাহজাহান, কমিশনের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া,প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজান,অর্থ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম শ্যামল, মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা তানজিনা বেগম,সাবেক মহিলা মেম্বার সেলিয়া বেগম,সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম, বাউল কামাল পাশা বেতার শ্রোতা ক্লাবের সহ-সভাপতি বাউল আমজাদ পাশা,শিল্পী আব্দুল কাইয়্যুম, কমিশনের সদর উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ারুল হক,মোঃ আবু তাহের, প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক ফরিদ মিয়া, অর্থ সম্পাদক নুরুল হাসান আতাহের, পৌর কমিটির সহ-সভাপতি রোয়েব চৌধুরী,আব্দুল মান্নান,সাধারন সম্পাদক শাকিল আহমদ,দপ্তর সম্পাদক ইজাজুল হক চৌধুরী,অর্থ সম্পাদক মহসিন উদ্দিন চৌধুরী রুবিন,হাসান মোঃ মোহাইমিন মুসা ও জনি রায়সহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনের শুরুতে আয়োজক সংগঠনের সাধারন সম্পাদক সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল,গানের স¤্রাট বাউল কামাল পাশা রচিত“বাঁচে কিনা মানুষ গরু ভাবিয়া দিন যায়/চৈত্র মাসের বোর ফসল খেয়েছে বন্যায়”শীর্ষক গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। মানববন্ধন শেষে ১৮ দফা দাবী বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও উন্নয়ন মোহাম্মদ সফিউল আলমের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ। দাবীগুলো হচ্ছে প্রথমত : অবিলম্বে সুনামগঞ্জ জেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করে চৈত্র মাসের সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় এবং গত বছরের কালবৈশাখী ঝড়-বন্যা ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলহানীর ঘটনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের যত দ্রুত সম্ভব নির্ভেজাল একটি তালিকা প্রস্তুত করত: বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর দ্বারা পুণর্বাসনের ব্যাবস্থা গ্রহন। দ্বিতীয়ত : জেলার হাওর উন্নয়নের জন্য সদাশয় সরকারের চলতি ২০১৬-১৭ অর্থ বৎসরের বরাদ্ধকৃত ৬৮ কোটি টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থ বৎসরের বরাদ্ধকৃত ৫৭ কোটি টাকা থেকে ২ বছরে বিল প্রদান ও উত্তোলন এবং আত্মসাৎকারী পাউবোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা,ঠিকাদার-ভাগীদার ও পিআইসির সাথে জড়িতদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করার পাশাপাশি দুদক ও দ্রুতবিচার আইনে মামলা দায়ের করা। তৃতীয়ত : হাওর-সীমান্ত ও সমতল এই ৩ ভূপ্রকৃতি বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ জেলার উন্নয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,কর্মকর্তা,কৃষক প্রতিনিধিসহ প্রকৃত উপকারভোগীদেরকে নিয়ে মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন। বাস্তব সম্মত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি,জিও-এনজিও,সাংবাদিক,শিক্ষক,আলেম সমাজ,সুশীল সমাজ ও তৃণমূলের প্রতিনিধি সমন্বয়ে হাওর উন্নয়ন কমিটি গঠন। চতুর্থত : ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ভাটি অঞ্চলে গণ সংযোগ কর্মসুচিতে আগত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভামঞ্চে উত্থাপিত দাবীর আলোকে সুরমা-কালনী-কুশিয়ারা ও পৈন্দা নদী খনন করা। এছাড়াও অন্যান্য নদী খাল ও বিলুপ্ত ঘোষিত বিল পূন: খনন করা। পঞ্চমত : ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবিকার স্বার্থে ১৪২৪ বাংলা সনে জলমহালের ইজারা স্থগিত ঘোষণা করা। ভাসান পানিতে মাছ ধরার অধিকার প্রতিষ্ঠা। ষষ্ঠত : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপর ধার্যকৃত সকল প্রকার ফি বাতিল ও মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা। জেলা ও উপজেলা সদরের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মান ও নজরদারী বৃদ্ধি। সপ্তমত : শুধুমাত্র আপদকালীন অর্থ বৎসরের এনজিওসহ সকল সরকারী ঋণ মওকূফ করা। চলতি দুর্যোগ মোকাবেলায় বিনাসুদে সকল কৃষকদেরকে সহজশর্তে ঋণ দান। অষ্টমতম : ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে আগামী মৌসুমে নামমাত্র মূল্যে সার বীজ প্রদান করা। নবমতম : বোরো মৌসুমে বিনাসূদে মৌসুমী ঋণ প্রদান করা। দশমতম : সেচ ব্যবস্থার সুবিধার স্বার্থে প্রয়োজনীয় স্থানে স্লুইচগেট অথবা রাবার ড্যাম স্থাপন এবং অকেজো স্লুইছগেট সচল করা। একাদশতম : প্রত্যেক কৃষক পরিবারকে ১টি করে ভিজিডি ও ভিজিএফ কার্ড প্রদান। দ্বাদশতম : পর পর ২ বারের অকাল বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ সুনামগঞ্জ জেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর ও প্রয়োজনে মানবিক বিপর্যয়গ্রস্থ জেলাবাসীর দুর্দশা লাগবে সুনামগঞ্জে মন্ত্রী পরিষদের বিশেষ সভার আয়োজন করত: অনন্য নজীর স্থাপনের মাধ্যমে হাওরবাসীর গণদাবী বাস্তবায়নে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহন। ত্রয়োদশতম : প্রত্যেকটি উপজেলায় কার্যকর বাজার মনিটরিং সেল গঠন করা। চতুর্দশতম : মহাজোট সরকারের শাসনামলের শুরু থেকে আজোবদি জেলার নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন সভায় না বসার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিহার করে একমঞ্চে বসতে বাধ্য করা। পঞ্চদশতম : আগামী বছরে নতুন ফসল উঠার পূর্ব পর্যন্ত ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে চাল-আটাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিক্রির ব্যবস্থা করা। ষোড়শতম : ধোপাজান ও যাদুকাটা নদীতে বালু পাথর উত্তোলনে বেকার কৃষক শ্রমিকদেরকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা। নদীতে অবৈধ চাঁদা আদায়কারীদেরকে গ্রেফতার করা। সপ্তদশতম : জেলা-উপজেলা-পৌরসভা-ইউনিয়ন সদরসহ সবকটি হাটবাজারে কেন্দ্র ভিত্তিক সরকার ঘোষিত ন্যায্য মূল্যের চাল সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। রমজান ও ঈদ-উল আযহার মাসে খয়রাতি সাহায্যের ব্যবস্থা করা। অষ্টাদশতম : দুর্নীতিমুক্ত সমবন্টনের জন্য পূণর্বাসনের প্রত্যেকটি স্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-আইনজীবী ও সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা গ্রহন এবং নজরদারী বাধ্যতামূলক করা।