সিলেটে জনসমুদ্র, নবি অবমাননার প্রতিবাদে গর্জন
ছবি : শাহীন আহমদ ও মো. মোজাম্মেল হক
সিলেট:: যে দিকেই চোখ যায় শুধু দুধসাদা টুপি আর আর পাঞ্জাবি। খানিক পর পর গর্জে উঠছেন তারা। মিছিল-স্লোগানে কাঁপিয়ে তুলছেন পুরো বন্দরবাজার এলাকা। যেন দু’কুল ছাপিয়ে ফুঁসে উঠা এক উত্তাল সমুদ্র। উলামা পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি, জামেয়া ক্বাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ির আহ্বানে বুধবার (৪ নভেম্বর) জোহরের নামাজের পর সিলেট নগরীর কামরান চত্বরে (সিটি পয়েন্টে) অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ। সমাবেশ শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ মিছিল। এর আগে ফ্রান্সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে উলামা পরিষদ বাংলাদেশের ব্যানারে এ কর্মসূচি আহ্বান করা হয়।
বুধবার সকাল থেকেই সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বাস ও লেগুনা গাড়ি নিয়ে মিছিলসহকারে হাজার হাজার নবিপ্রেমী জনতা এসে কামরান চত্বরের সমাবেশে যোগ দেন। জোহরের নামাজের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে নগরীর সিটি (কামরান চত্বর) ও কোর্ট পয়েন্টসহ পুরো বন্দরবাজার এলাকা। এসময় তালতলা পয়েন্ট, কিনব্রিজের মুখ, করিমুল্লাহ মার্কেটের সামন থেকে জিন্দাবাজার পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাগুলো কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়। কর্মসূচিতে যোগদানকারী জনতার হাতে কালিমা, কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও প্রতিবাদি স্লোগান সম্বলিত প্লে-কার্ড এবং ফেস্টুন দেখা যায়। জোহরের নামাজের পরপরই শুরু হয় সমাবেশের মূল কার্যক্রম। এতে সভাপতিত্ব করেন দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি মুহিব্বুল হক গাছবাড়ি।
মাওলানা আবুল হাসান ফয়সল, মাওলানা জুনায়েদ আহমদ কিয়ামপুরী, মুফতি রশীদ আহমদ, মাওলানা আহমদ সগীর আমকুনী ও মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ খাসদবীরির যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, মাওলানা আলীম উদ্দিন দুর্লবপুরী, মাওলানা নরুল ইসলাম খান সুনামগঞ্জি, নাজিমে এদারা মাওলানা আব্দুল বছির সুনামগঞ্জি, সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মাওলানা শেখ মহসিন আহমদ কৌড়িয়া, মাওলানা শায়েখ আব্দুল গফফার রায়পুরী, মাওলানা শামসুদ্দিন দুর্লবপুরী, মাওলানা মুফতি ওলিউর রহমান দারুস সালাম, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা মুছলেহ উদ্দিন রাজু, মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, মাওলানা হেলাল আহমদ হরিপুরী, মাওলানা ইউসুফ শামপুরী, মাওলানা আব্দুস সোবহান কাজিরবাজার,মাওলানা মুফতি রশীদ আহমদ মকবুল, মাওলানা মুফতি আবুল হাসান লামারগ্রাম, মাওলানা আব্দুল জব্বার লামনিগ্রাম, মাওলানা আব্দুস সালাম বাগরখালী, মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, মাওলানা আব্দুল মালিক মোবারকপুরী, মাওলানা মাসুক আহমদ সালামী, মাওলানা মুহিবুর রহমান, মাওলানা নুরুল হক বিশ্বনাথী, মাওলানা আব্দুল মুছব্বির জকিগঞ্জি, মাওলানা হারুনুর রশীদ আল আজাদ, মাওলানা মুহিব্বুর রহমান মিঠিপুরী, মাওলানা সাইফুল্লাহ নয়াসড়ক, মাওলানা ফারুক আহমদ শাহবাগী, মাওলানা শরীফ আহমদ শাহান, মাওলানা ইমদাদুল্লাহ কাতিয়া, মাওলানা আবুল হোসাইন চতুলী, মাওলানা গাজী রহমত উল্লাহ, মাওলানা ইকবাল হোসাইন, মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা বুরহান উদ্দিন, মাওলানা শেখ নাসির উদ্দিন, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, মাওলানা নজরুল ইসলাম তোয়াকুলি ও মাওলানা হারুনুর রশীদ চতুলি প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা ফ্রান্স সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আগুন নিয়ে খেলা করবেন না। আল্লাহ, নবি সা. ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটূক্তি করলে মুসলমানের কলিজায় আগুন লেগে যায়। সে আগুনে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। বক্তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ফ্রান্সের সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানান। আসরের নামাজের আগে শেষ হয় সমাবেশের কার্যক্রম। পরে সমাবেশস্থল থেকে নগরীর আম্বরখানা পর্যন্ত বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২০-২৫ হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন বলে ধারনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে মিছিল সহকারে তাওহিদি জনতা সিলেট নগরীতে ঢুকার ফলে বুধবার দুপুর থেকে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিকসহ অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।