বার্তা ডেস্ক :: রবিবার রাত সাড়ে ৯টা। বেতনের টাকা হাতে পেয়ে মাসের খরচের পরিকল্পনা করছিলেন সদ্য বাবা হওয়া রিয়াদ ও মা সালমা জাহান। মাত্র চারদিন আগে (৪ নভেম্বর) ঘরে নতুন সন্তান এসেছে। নতুন অতিথির জন্য আরো কিছু ব্যবহার্য দরকার। সঙ্গে কিছু পথ্য। এরই মধ্যে আকস্মিকভাবে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে বাবা মা হতভম্ব হয়ে যান। কি হয়েছে বুঝতে গিয়ে দরজা খোলেন রিয়াদ। মুহূর্তেই তার এককক্ষের ঘরেও প্রবেশ করে আগুন। তখন দ্রুত সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি। সঙ্গে স্ত্রীকে। এই দুজন বাস করেন আকবরশাহ থানার উত্তর কাট্টলী এলাকার একটি ছয় তলা ভবনের উপর তলায়। আগুনের লেলিহান শিখা ভেদ করে বাবা-মা বুকের ধন নিয়ে দ্রুত যান পাশের ফ্ল্যাটে। যেটি নবজাতকের নানার বাড়ি। ওই বাড়িতে পৌঁছে তারা দরজা নক করেন। ভেতর থেকে দরজা খোলে দেন শিশুটির খালা। দরজা খোলেই দেখেন, বাবা-মায়ের শরীরে পেছনে কাপড়ে আগুন জ্বলছে আর তাদের বুকে নবজাতক। তখনই নবজাতককে কোলে নিয়ে বাবা-মায়ের শরীরের আগুন নেভাতে ব্যস্ত হন ওই বাসার সবাই।
ওই বাসায় অগ্নিকাণ্ডে ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ বছর বয়স্ক এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ছয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ক্ষতি হয়নি শুধু চারদিনের শিশুটির। যার এখনো নামই রাখা হয়নি। এরই আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বাবা-মা সন্তানকে রক্ষা করতে সক্ষম হলেও দুজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শিশুটিকে এখন দেখভাল করছেন নানী। ঘটনার বিষয়ে অগ্নিদগ্ধ রিয়াদ উদ্দিনের শ্যালিকা সফরিনা জাহান জানিয়েছেন, রাত আনুমানিক ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে বাসার দরজায় নক করে। আমি দরজা খুলেই দেখি নবজাতক বুকে নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়েছেন দুলাভাই ও আপা। তখন তাদের শরীরের পেছনের অংশে আগুন। আমি দ্রুত সন্তানকে নিয়ে তাদের শরীরের আগুন নেভাতে ব্যস্ত হয়। পরক্ষণে বাবা-মাকে দ্রুত নেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সকালে সন্তানকে হাসপাতালে নেওয়া হয় মায়ের দুধ পান করাতে।
ছয় তলা ভবনেরর ছয় তলায় তিনটি ফ্ল্যাট। মধ্যের ফ্ল্যাটে কক্ষের সংখ্যা চার। দুই পাশের বেডরুম ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। রান্নাঘর ও খাবার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈদ্যুতিক লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মূলত এই ঘরেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘরটিতে বাস করেন মিজানুর রহমান (৪২)। তার স্ত্রী শিক্ষিকা বিবি সুলতানা (৩৫), তাদের সন্তান মাহের (৭), মানহা (২), তার ভাই সাইফুর রহমান (১৮) ও বোন সুমাইয়া (১৭) এবং মা পায়েরা বেগম (৬৫)। তাদের মধ্যে মা মারা গেছেন। বাকিদের সবাইকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নবজাতকের বাবা-মাকে ঢাকায় নেওয়া হয়নি। তাদের অবস্থা তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে কিছুটা ভালো।
ওই একই বাসায় সাবলেট ভাড়া থাকেন রিয়াজ উদ্দিন ও সালমা জাহান বৃষ্টি দম্পতি। মূলত তারা পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিলেন। বৃষ্টি সন্তান সম্ভাবা হওয়ার পর মিজানুর রহমানের বাসার একটি রুম সাবলেট ভাড়া নেন। সেই বাসাতেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এখানে বৈদ্যুতিক লাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখা গেলেও পুরো ঘর ভস্মিভূত হয়নি। বিছানার ছাদরও পুরো পুড়েনি। আলনার কিছু কাপড় পুড়েছে। তাই প্রাথমিকভাবে এটি বৈদ্যুতিক শর্কসার্কিট বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে গ্যাস বিস্ফোরণ বা অন্য কোনো কারণ আছে কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।-কালের কণ্ঠ

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn