বার্তা ডেক্সঃঃ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নির্মাণ প্রকল্পের স্থান নির্বাচন নিয়ে অবশেষে বিতর্কের অবসান হলো। জেলাবাসীর দাবীর প্রতি সম্মান জানিয়ে নিজের অবস্থান থেকে সরে আসলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম,এ মান্নান। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি অভিজাত হেটেলে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রবীন রাজনীতিবিদ আলহাজ মতিউর রহমানের আহ্বানে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় এ মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক সংলগ্ন আহসান মারা ব্রিজের–উত্তর-পূর্ব এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য উপযুক্ত। বৈঠকের এমন সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক ভাবে সুনামগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা মন্ত্রী ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আব্দুল মান্নানকে অবহিত করলে তিনি তাতে সম্মতি স্থাপন করে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিককে জাতীয় সংসদে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে সংশোধনী আনার জন্য অনুরোধ জানান। রাতেই খবরটি সুনামগঞ্জ তথা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে স্বস্থি ফিরে আসে এবং অনেকেই এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ আসনের এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি শামীমা শাহরিয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ইনামুল কবীর ইমন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম শামীম, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট খায়রুল কবীর রুমেনসহ বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের অনেকেই বলেছেন, স্থানটি প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে সরকারি খাস জমি রয়েছে প্রচুর। অধিগ্রহণের খরচ কম। স্থানটি যদিও নিচু, তবে উন্মুক্ত। চারদিকে কয়েকটি রাস্তা সংযোগের সুযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে শান্তিগঞ্জ-দেখার হাওর-আমবাড়ী সড়ক হয়ে ডলুরা পর্যন্ত নতুন সড়ক বা ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে নতুন শহরের গুড়াপত্তন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো যদি পানির উপর ভাসমান হয় সাশ্রয়ী ও নয়নাভিরাম হবে। ‘উত্তরের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে দীগন্ত বিস্তৃত দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হলে বর্ষায় ভেনিস নগরীর রূপ নেবে। সুনামগঞ্জ হবে পর্যটন সমৃদ্ধ। সবার সুবিধা হবে,’ বলেন, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা সদরের অদূরে পরিকল্পনামন্ত্রীর বাড়ি শান্তিগঞ্জ হওয়ায় ঐ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের দাবি উঠে শুরুতেই। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে এমন পরিবর্তনও আনা হয়। কিন্তু আশাহত হন সুনামগঞ্জবাসী। স্থান নির্ধারণ নিয়ে লেখালোখি শুরু হয়। বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সুনামগঞ্জ- ৪ আসনের সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান মিসবাহ‘র নেতৃত্বে স্থানীয় ভাবে আন্দোলন গড়ে উঠে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঘরনায়ও প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে দ্বিমত দেখা দেয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আহ্বানে অনুষ্ঠিত বৈঠক ও সিদ্ধান্ত সব বিতর্কের অবসান ঘটে।
এদিকে, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বিআরটিএ অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার, যুব মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প শান্তিগঞ্জ এলাকায় স্থাপন হচ্ছে। তাই একই এলাকায় সব কিছু স্থাপন না করে সকলের সুবিধার্থে জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ মনে করেন ডাবর ব্রিজ এলাকার উত্তর-পূর্ব সীমানায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন যৌক্তিক। অবস্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলে আসছেন ‘আমি বেঁচে থাকলে সুনামগঞ্জের উন্নয়নের কমতি হবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে জনমতের প্রাধান্য থাকবে।’
সূত্র মতে, এর আগে গত রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রীর তার বাসায় বৈঠক ডাকেন। কিন্তু জেলা সদরকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে স্থাপিত হবে- এমন বৈঠকে অংশ নেননি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘জনমত উপেক্ষা করে কোন সীদ্ধান্তে যাওয়া যায় না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ এতগুলো মেগা প্রকল্প একটি এলাকায় হওয়া শুভনও নয়। এর নেতিবাচক প্রভাব হবে।’ তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর জনগণের সুবিধা অনুযায়ী আমরা সর্বসম্মতিক্রমে স্থান নির্বাচন করেছি। এখন এর দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই। একই সাথে পরিকল্পনামন্ত্রীকে নিয়ে সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ স্থাপন, ডলুরা শুল্ক স্টেশন স্থাপনসহ অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমান সরকারের আমলেই বাস্তাবায়নের চেষ্টা নেবো।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৪৭৭ বার