বার্তা ডেস্ক : করোনা ভাইরাস ছাড়াও ২০১৯ ও ২০২০ সাল প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাকাল। গতবছরের মে’তে আঘাত হানে বর্তমান শতাব্দীর প্রথম সুপার ঘূর্ণিঝড়। আম্ফান নামের সেই ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল, ভারতের ওড়িষা ও পশ্চিমবঙ্গে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয় এসব অঞ্চল। বর্তমান শতাব্দীর দীর্ঘমেয়াদি বন্যাও এবার দেখেছে বাংলাদেশ। অতিবৃষ্টিও ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন স্থাপনা, ফসলসহ ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আম্ফান, বন্যা ও অতিবৃষ্টির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকার ৫ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা খরচে একটি প্রকল্প নিতে যাচ্ছে।  মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের ১৪টি জেলার ৬৯টি উপজেলা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২৮টি জেলার ১৮২টি উপজেলা এবং অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২২টি জেলার ১৩৯টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এবং ব্রিজ-কালভার্ট পুনর্বাসনের মাধ্যমে পল্লী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সংরক্ষণ, টেকসই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় ও সময় সাশ্রয় করা, বিভিন্ন পণ্যাদির বাজারজাত ব্যবস্থা সহজ করা, সড়ক অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে কৃষি/অকৃষি খাতে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখা এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এ প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৩৮৮ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক পুনর্বাসন করা, ২ হাজার ২৭৪ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক পুনর্বাসন করা, ১ হাজার ৫৩৪ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন করা, ৭৮ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক পুনর্বাসন করা, ৪ হাজার ৬৩১ দশমিক ৮৫ মিটার (২৬৮টি) ব্রিজ পুনর্বাসন/পুনর্নিমাণ করা, ৬৯২ দশমিক ৩৭ মিটার (২৩৯টি) কালভার্ট পুনর্বাসন/ পুননির্মাণ করা এবং ৩২৮ কিলোমিটার বৃক্ষ রোপণ/ভেটিবার করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান, বন্যায় ও অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী অবকাঠামোগুলো জলবায়ু সহনশীল টেকসই অবকাঠামো হিসেবে নির্মাণ করা এবং এর পাশাপাশি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে অর্থনৈতিক গতিশীলতা আনয়নের ক্ষেত্রে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া গ্রাম সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক ও উপজেলা সড়ক এবং ব্রিজ/কালভার্ট পুনর্বাসন/পুনর্নির্মিত হলে পল্লী অঞ্চলের নিরবছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় হ্রাসসহ জীবনমানের উন্নয়ন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা সড়ক নেটওয়ার্ক এর সুফল নিশ্চিত, কৃষি-অকৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ সার্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে প্রকল্পটি ইতিবাচক অবদান রাখবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn