বার্তাডেক্সঃঃ কলাবাগানের ডলফিন গলির ফারদিনের বাসা থেকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যায় আনুশকা নূর আমিন। আনুশকার মৃত্যুর পরপরই হতবিহ্বল হয়ে পড়ে অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহান। হাসপাতালে যাওয়ার পরেই আনুশকার মৃতদেহ রেখে পালাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু সময় এবং সুযোগ কোনোটাই পায়নি। ততক্ষণে পুলিশ তার তিন বন্ধুসহ চারজনকে আটক করে। গত শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা দিয়েছে ফারদিন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২৬শে জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ফারদিনের দেয়া তথ্যমতে ইনস্ট্রাগ্রামের মাধ্যমে তাদের গত দুই থেকে তিন মাস আগে পরিচয় হয়।

সূত্র জানায়, ডলফিন গলির বাসায় ফারদিন, তার বড় ভাই, গ্রামের দূর সম্পর্কের এক চাচাতো ভাই থাকেন। এবং তার বাবা আরেক ভাইকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে থাকেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার। ফারদিনের নানা অসুস্থ হওয়ায় ঘটনার দিন তার মা নানাকে দেখতে বগুড়ায় যান। তাই আগের দিন মুঠোফোন ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করার সময় ফারদিন আনুশকাকে জানায় তার বাসা খালি থাকবে। চাইলে সে আসতে পারে। ফারদিন জানিয়েছে, আনুশকা বেলা সাড়ে ১১টায় তার মা’কে ফারদিনের বাসায় যাওয়ার কথা জানিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। এ সময় তিনি আনুশকাকে দুপুরের খাবার কিনে দেয়ার কথা বললেও তারা নেয়নি। পরবর্তীতে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের মেট্রো শপিংমলের কাছ থেকে আনুশকাকে সঙ্গে নিয়ে ফারদিন কলাবাগান মোড়ে লাজফার্মার কাছে রেখে সে একা বাসায় প্রবেশ করে।

এ সময় আনুশকাকে জানায়, বাসায় ঢুকে ফোন দিলে সে যেন বাসায় যায়। আনুশকা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ভাবেই ফারদিনদের ফাঁকা ফ্ল্যাটে কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই প্রবেশ করে। আনুশকার সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্কের পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রেখেছিলো ফারদিন। কিন্তু আনুশকা জানতো তারা বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করে পরবর্তীতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ফারদিনের ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে যাবে। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পরে কথা বলার এক পর্যায়ে ফারদিন আনুশকার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। দৈহিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে আনুশকার অতিমাত্রায় ভ্যাজাইনাল ব্ল্যাড ফ্লো শুরু হয়। এ সময় ফারদিন আনুশকাকে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে। আনুশকা বাথরুমে যাওয়ার আগেই খাটের উপর পড়ে যায়। এ সময় প্রথমে ফারদিন ভেবেছিলো আনুশকা ভয় পেয়েছে। পরবর্তীতে কাছে গিয়ে দেখতে পায় আনুশকার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। এবং দাঁত লেগে গেছে।

এ সময় ফারদিন কি করবে বুঝতে না পেরে দ্রুত তাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে তুলে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। নেয়ার পথেই গাড়িতে মারা যায় আনুশকা। ফারদিনের আত্মবিশ্বাস ছিল সে আনুশকাকে বাঁচাতে পারবে। তাই সে পালায়নি। এবং পরবর্তীতে যখন জানতে পারে আনুশকা আর বেঁচে নেই এ সময় সে পালাতে চাইলেও পালানোর সুযোগ পায়নি। হাসপাতালে আসার পথেই ফারদিন আনুশকার মা এবং ওর বান্ধবীকে ফোন করে জানায় আনুশকা চেতনা হারিয়ে ফেলেছে। এবং তার তিন বন্ধুকে জানায় যে, ফারদিন নিজেই অসুস্থ, তাই হাসপাতালে আসতে হবে। পরবর্তীতে কৌশলে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় আনুশকার বয়স ১৭-এর পরিবর্তে ১৯ লেখায়। বন্ধুরা হাসপাতালে এসে দেখে ফারদিন মেঝেতে বসে আছে। ততক্ষণে তারা জেনে যায় আনুশকা আর বেঁচে নেই।

সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন বুঝতে পারে আনুশকা আর বেঁচে নেই তখন সঙ্গে সঙ্গে তারা স্থানীয় কলাবাগান থানা পুলিশকে জানায়। হাসপাতালের কাছে থাকা টহল পুলিশ গিয়ে ফারদিনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আটক করে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট না পেয়ে তার তিন বন্ধুকে সাময়িকভাবে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ একটি সাদা কুশান বালিশ (পিলো) এবং চাদরসহ আনুষঙ্গিক অনেক আলামত জব্দ করে। চাদরের কিছু অংশ এবং কুশানটি সম্পূর্ণ রক্তে ভেজা ছিল।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) আ ফ ম আসাদুজ্জামান ও পরিদর্শক (অপারেশন) ঠাকুর দাস মালো বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের দেয়া তথ্যানুযায়ী নিম্নাঙ্গ ও পায়ুপথে আঘাত এবং রক্তক্ষরণের চিহ্ন দেখা গেছে। বিকৃত যৌনাচারের কারণে আর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে আনুশকার- এমনটি জানা গেছে। চেতনানাশক কোনো কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি-না সেজন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn