বার্তা ডেস্ক: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত মাদার ফিসারিজ খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে বিবেচিত। বিশাল এ হাওরের জলরাশির চারদিকে হিজল-করচ, নলখাগড়া, চাইল্যাবনসহ বিভিন্ন জাতের গাছগাছালি সমৃদ্ধ সবুজ বনানী অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রমও বটে। সুদূর সাইবেরিয়া থেকে প্রতি বছর শীতের শুরুতে অতিথি পাখিরা এদেশে খাদ্য ও নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয় এ অভয়াশ্রমে। কিন্তু প্রতিনিয়ত জ্বালানি হিসেবে অবাধে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নলখাগড়া, চাইল্যাবন, হিজল-করচ গাছের ডালপালা। উজাড় হচ্ছে ঘন সবুজবন। গাছগাছালি কমে যাওয়ার কারণে অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রমও এখন হুমকির মুখে। কমে গেছে অতিথি পাখিদের উপস্থিতি। বন উজাড় হতে থাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য হ্রাসের পাশাপাশি এর জীববৈচিত্র্যও ক্রমশ হুমকির মুখে পড়ছে। সামগ্রিকভাবে বিপন্ন হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওর এবং এর আশপাশের পরিবেশ।

১৯৯০ দশকের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার বিষয়টি মিডিয়ায় উঠে এলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশের আটটি স্থানকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে পরিবেশ সংরক্ষণের দাবি করে। এই আটটি অঞ্চল হলো—সুন্দরবন, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, যশোরের মাঠচান্দ, কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন ও সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের উপকূলীয় অঞ্চল, সিলেটের কুলাউড়ার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও হাকালুকি হাওর। এগুলো তখন পরিবেশের জন্য স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয় এবং এই আটটি স্থানে ১৯৯৭ সালের ২৮ আগস্ট জারিকৃত পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা কার্যকর হয়।

সারা বিশ্বে রামসার আওতাভুক্ত এলাকা হচ্ছে ১ হাজার ৩১টি এবং এর মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর একটি অন্যতম এলাকা। রামসার কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের পরিচিতি ঘটে ১৯৯২ সালের মে মাসে। পরবর্তীকালে রামসার সাইট হিসেবে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওর। রামসার ঘোষণার পর টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রচলিত ইজারাব্যবস্থা বন্ধ এবং কর্তৃত্ব পরিবর্তিত হয়। একটি বৃহত্ জলমহাল হিসেবে আগে টাঙ্গুয়ার হাওরের কর্তৃত্ব ছিল শুধু ভূমি মন্ত্রণালয়ের হাতে। এখন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের হাতে এর কর্তৃত্ব। রামসার ঘোষণার পর টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি এই এলাকাকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও গুরুত্বও বেড়ে যায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে দেখা যায়, হাওর পাড়ের মানুষ জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নলখাগড়া, বনতুলসী, চাইল্যাবন, হিজল-করচ গাছের ডালপালা ছোট ছোট নৌকাবোঝাই করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। এ প্রসঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওর গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মনির হোসেন বলেন, আনসাররা তত্পরতা বাড়ালে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মন্দিয়াতা গ্রামের সানজু মিয়া বলেন, গত দুই দশক ধরে টাঙ্গুয়ার হাওরে গাছকাটা চলছে। এখন হাওরের গাছপালা অনেক কমে গেছে। প্রতিদিনই বনখেকোরা প্রকাশ্যে কেটে নিয়ে যাচ্ছে নলখাগরা, চাইল্যাবন ও হিজলবনের গাছপালা।

এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, হাওরপাড়ের লোকজনদের জনসচেতনতামূলক কর্মশালার ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা নিজ দায়িত্বেই হাওর সুরক্ষায় দায়িত্ব পালন করে থাকে। তিনি জানান, গত শুক্রবার সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে কর্তব্যরত কমিউনিটি গার্ড নলখাগড়া, চাইল্যাবন, হিজল-করচ গাছের ডালপালাসহ চারটি নৌকা আটক করেছে। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল বলেন, যারা টাঙ্গুয়ার হাওরের বনের গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-ইত্তেফাক

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn