সিলেটে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পোশাক পরে প্রবাসী খুন
সিলেট : সিলেট সিটি করপোরেশনের রাতের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি স্ত্রীসহ সিলেটে বেড়াতে আসা এক যুবককে খুন করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীর পোশাক পরেই। বিষয়টি জানার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওদিকে গতকাল সিলেটের কোতোয়ালি পুলিশ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পোশাকসহ খুনের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুও উদ্ধার করা হয়েছে। এখন থেকে রাতে যারা সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে আসবেন তাদের পুলিশ জড়ো করে একসঙ্গে পুলিশের গাড়িতেই গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে এক প্রবাসী নিহত হয়েছেন। রাত আড়াইটার দিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পোশাক পরে তিন যুবক ওই খুনের ঘটনা ঘটায়। গ্রেপ্তারের পর তারা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে- রাতে তারা সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীর পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়। এ কারণে তারা সন্দেহের বাইরে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা রিকশায় আসা যাত্রীদের পথ আগলে ছিনতাই করে। এরপর পালিয়ে যায়। কোতোয়ালি থানা পুলিশ গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- গত ১২ তারিখ রাত আড়াইটার দিকে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দা হাছনা হেনা বেগম ও তার স্বামী আসাদুজ্জামান রিপন কুয়েত যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেডিকেল চেকআপ করাতে সিলেটে আসেন। তারা সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গাড়ি থেকে নেমে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে যাওয়ার জন্য ব্যাটারি চালিত অটোরিকশায় উঠেন। অটোরিকশাটি কীন ব্রিজ হয়ে বন্দর এলাকা দিয়ে জিন্দাবাজার ঢোকার মুহূর্তে দুই যুবক গতিরোধ করে। তারা এ সময় ধারালো অস্ত্র চাকু দেখিয়ে হেনা ও রিপনের কাছে যা আছে তা দেয়ার দাবি জানায়। তাদের কথামতো রিপন সঙ্গে থাকা ১৪ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন ছিনতাইকারীদের দিয়ে দেয়। এ সময় ছিনতাইকারীরা হেনার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এতে বাধা দেন রিপন। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে রিপনের বুকের বাম পাশে উপর্যুপরি আঘাত করে ছিনতাইকারীরা হেনার কাছ থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে ঘটনার পরপরই হেনা গুরুতর অবস্থায় রিপনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় হাছনা হেনা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করলে এসি সাদেক কাওছার দস্তগীর, কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেনসহ ৭ জনকে নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। ওই টিম ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে তারা গতকাল সিলেট নগরীর খাসদবির এলাকার ভাড়াটে বাসিন্দা সুমন মিয়া ওরফে মানিক, চৌকিদেখি এলাকার ভাড়াটে জমিরউদ্দিন ও মজুমদার পাড়ার বাসিন্দা হাসান আলীকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত সুমনের কাছ থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীদের একটি পোশাক পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সুমনের স্বীকারোক্তি মতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুও উদ্ধার করেছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার সাদেক কাউছার দস্তগীর গতকাল সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানিয়েছেন- মানিকের কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মীর পোশাক পাওয়া যায়। এবং গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছে তারা পরিচ্ছন্নকর্মীর পোশাক পরেই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে জমিরউদ্দিন ও হাসান আলী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের খুনের ঘটনা স্বীকার করেছে। তাদের আজ সিলেটের আদালতে পাঠানো হবে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দিতে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে- খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ত অন্যতম মানিক গতকাল পর্যন্ত মুখ খোলেনি। তাকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মানিকসহ ছিনতাইকারীরা নিজেদের পরিচ্ছন্নকর্মী দাবি করে রাতের বেলা নির্বিঘ্নে শহরের রাস্তায় অবস্থান করে। পুলিশ তাদের কোনো সন্দেহ করে না। বিষয়টি পুলিশ জানার পর এখন রাতে বেলা যারাই সিলেটে আসবেন তাদের পুলিশ স্কট দেবে। যতটুকু সম্ভব পুলিশ রাতের বেলা জনগণের নিরাপত্তা প্রদান করবে বলে জানান তিনি।