ইমানুজ্জামান মহীর ফেসবুল থেকে-১৯৭৪ সালে আওয়ামীলীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলতে বলেছিলেন, “আল্লাহ তালা বলেছেন তিনি রাব্বুল আল আমিন। রাব্বুল মুসলিমিন না।” সেই রাব্বুল আল-আমিন ( সৃষ্ট জগতের পালনকারী) আল্লাহ কে অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসীরা আজ মুসলিমেদের পালন কর্তা বানিয়ে দিয়েছে।
বিগত কিছুদিন ধরে দেশে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হচ্ছে তা দেখে বিদেশ বসেও উৎকন্ঠায় মুক্ত হতে পারছিনা। সেই সহিংসতার মাঝে আগুনে ঘি ঢেলেছেন আরেক প্রতিমন্ত্রী। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম তুলে দিতে বলেছেন। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার যারা বিরোধিতা করে সেই কথিত মোল্লাদের তিনি দাড়ি টুপি সেইভ করে দেবেন বলেছেন। অনেকে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন। । ৯৩ ভাগ মুসলমানের শক্তিতে কেউকেউ অবশ্য মন্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছেন। আমিও তার এই বক্তব্যের বিরুধীতা করছি। তবে সংবিধান থেকে রাষ্ট্র ধর্ম বাদ দেবার জন্য নয়। তার অশালীন বক্তব্যের জন্য।
আজকাল প্রায় ওয়াজ নসিহতে, মুফতি, মোওলানাদের কথায় ৯৩% ভাগের কথাটা উচ্চারিত হতে শুনি। মাঝে মধ্যে তারা সেই শক্তির ভয় দেখিয়ে হুংকারও ছাড়েন। দেশটি মনে হয় এই ৯৩ ভাগের। আমার প্রশ্ন কেউকি বলতে পারবেন এই ৯৩% ভাগের কতো ভাগ মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? কিংবা কতো ভাগ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দালালি করেছেন? ৯৩ ভাগের পরে যে ৭ ভাগ তার কতো ভাগ রাজাকার আর মুক্তিযোদ্ধা ছিলো? দেশ যারা স্বাধীন করেছে তারাইতো দেশ চালাবে? না যারা দেশের বিরুধীতা করেছে তাদের কথায় দেশ চলবে?
স্বাধীনতা পর রাষ্ট্রধর্ম বলেতো কিছু ছিলোনা। হঠাৎ করে তা কি ভাবে গজালো। আমার প্রশ্ন রাষ্ট্রধর্মের প্রয়োজনটা কি? রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কি? রাষ্ট্র তো ধর্মিয় আচার অনুষ্ঠান পালন করতে পারেনা। করবে মানুষ। ধর্মতো রাষ্ট্রের নয় মানুষের। তর্কের খাতিয়ে হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন তা হলে “রাষ্ট্রভাষা” কেন? ভাষা রাষ্ট্রের হলে ধর্ম রাষ্ট্রের হবে না কেন? রাষ্ট্রধর্ম না মানলে রাষ্ট্রভাষা মানার দরকার কি? রাষ্ট্রভাষা হতে পারলে রাষ্ট্রধর্ম হতে বাধা কিসে? যুক্তিটা কি যুক্তি সঙ্গত? প্রশ্নটা নিজেকে নিজেই করবেন। উত্তর পেয়ে যাবেন।
আল্লাহ তালা পবিত্র কোরানে সুরা হিজরের ৯ নাম্বার আয়াতে বলেছেন,
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং অবশ্য আমিই এর সংরক্ষক।-অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
মহান আল্লাহ তালা নিজে পবিত্র কোরানের হেফাজকারী ঘোষনা দিলেও বাংলাদেশের অন্ধ ধর্মবিশ্বাসী মুসলমান আল্লাহর সেই আশ্বাসবাণীর উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এরা আল্লাহকে মানেন। বিশ্বাস করেন কিন্তু আল্লাহ তালার আশ্বাসবানীতে বিশ্বাস করেন না। পৃথিবীর কোথাও “কোরানের উপর আঘাত এলে বাংলাদেশের তথাকথিত মুর্দে মুমিনরা গর্জে উঠেন। বিশ্বের মুসলমানদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত না লাগলেও বাংলাদেশের ধর্ম বিশ্বাসীদের লেগে যায়। এতো ঠুনকো আমাদের ধর্ম বিশ্বাস।
২০১৩ সালের ৫-৬ মে হেফাজতের আন্দোলনে শাপলা চত্বরে শতশত কুরআন শরীফ পুড়েছে।পবিত্র কোরআন শরিফকে অপমানিত করা হয়েছে। কুরআন হেফাজতকারীরা তখন কিছু বলেননি। কারন তখন তারাই ছিলেন কোরানের অবমানকারী। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা শহরে কুরআন অবমাননা হয়েছে মন্দিরে। মন্দির হিন্দুদের। সুযোগ তাই প্রতিশোধের। প্রতিশোধের কথা বলে মন্দিরে হামলা- ভাংচুর হয়েছে কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীতে। রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতিতে, ফেনীতে দোকান-পাটে হামলা হয়েছে। সহিংসতায় দিতে হয়েছে অন্তত ছয়জনের প্রাণ।
হাদীসানুযায়ী সংখ্যালঘুরা হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য আমানত। এ আমানতের খেয়ানত যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে রাসুল ( সা:) বিচার দিবসে আল্লাহর আদালতে মামলা করবেন। রাসুলের উম্মত হয়ে মুসলমানরা কখনো ধর্মীয় দিক থেকে হিন্দু জনগোষ্টীর ক্ষতি করতে পারেনা। যারা তা করে বুঝতে হবে এরা প্রকৃত ধর্মপরায়ণ না । মোহাম্মদ(সাঃ) উম্মত নামধারীরা মোহাম্মদ (সাঃ) কে মানলেও মানেনা তার কথা। এরা কেমন মুসলমান? কি তাদের ধর্ম? বুঝতে পারি না।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
২০০ বার