ওয়েছ খছরু: যুবক আফজালের বাড়ি জগন্নাথপুরের দীঘলবাঁকে। গত শুক্রবার একটি সমন নিয়ে পুলিশের একটি টিম গিয়েছিল তার বাড়িতে। পুলিশ দেখেই দৌড়ে পালায় আফজাল হোসেন। এতে পুলিশের সন্দেহ হয়। ঘরের ভেতরে বোমা তৈরির অনেক সরঞ্জাম দেখতে পায় পুলিশ। এরপর থেকে আফজালের বাড়ি ছিল নজরদারিতে। রোববার সকাল থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে পুলিশ। এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় এলাকায়। চাঞ্চল্যও দেখা দেয় সিলেটে। পুলিশের তরফ থেকে খবর দেয়া হয় বোম ডিসপোজাল ইউনিটকে।
ঢাকা থেকে আসেন ওই ইউনিটের সদস্যরা। টানা কয়েক ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে আফজালের বাড়ি থেকে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পলাতক আফজাল। সোমবার গভীর রাতে নবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে সে-ও। এমন ঘটনায় রহস্য দেখা দিয়েছে এলাকায়। অজোপাড়া গা জগন্নাথপুরের দীঘলবাঁক। এই গ্রামের ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসেছিলে আফজাল। ঘুণাক্ষরে কেউ টের পাননি। বাড়িতে পুলিশ যাওয়ায় আফজালের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের রহস্য ফাঁস হয়। আফজাল হোসেনের বাবা আখলাকুর রহমান।
পুলিশের মতে; আফজাল পেশায় একজন শীর্ষ অস্ত্রবাজ। অস্ত্রসহ আগেও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। কারাগারেও ছিল বেশ কিছুদিন। এরপর থেকে বেশির ভাগ সময় বসবাস করেন সিলেট নগরীতে। এলাকার লোকজন জানিয়েছেন- ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এলাকায় খুব বেশি থাকতেন না। মানুষের সঙ্গে মেলামেশা ছিল খুব কম। পুলিশ জানায়- গত শুক্রবার জগন্নাথপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিক দীঘলবাঁক গ্রামে আফজাল হোসেনের নামে আদালতের ইস্যুকৃত সমন জারি করতে যান। এ সময় বাড়িতেই ছিলেন আফজাল হোসেন। পুুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আফজল দৌড়ে পালিয়ে যায়। এতে সন্দেহ হয় পুলিশের। পুলিশ সদস্যরা দেখতে পান তার বাড়িতে বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম রয়েছে। সমন নিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা ফিরে এসে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন। পুলিশের তরফ থেকে বাড়িতে নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রস্তুতি নিয়ে রোববার সকাল থেকে উপজেলার আশারকান্দি ইউনিয়নের ফেচির বাজারের দীঘলবাঁক গ্রামের আফজাল হোসেনের বাড়িটি ঘিরে রাখে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। তবে- ওই দিনও আফজাল বাড়িতে ছিল না। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি), অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট ও সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম এসে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বাড়ি থেকে একটি রিভলবার, একটি ল্যাপটপ, ৯টি মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও পাউডার, দুইটি ওয়াকিটকি সদৃশ বস্তু ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। দিনভর অভিযান শেষে বিকালে এসব জিনিস উদ্ধারের তথ্য জানান সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন- গত রোববার জগন্নাথপুর থানার এএসআই মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিক নন-এফআইআর মামলা (নং-১১৪/২০২২ ও ৩৭৬/২০২২) এর আসামি আফজাল হোসেনের নামে সমন জারি করতে যান। ওই বাড়িতে গেলে আফজাল হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান তিনি। তখন আসামির ঘরের কয়েকটি কক্ষে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সাদা পাউডার ও যন্ত্রপাতি দেখতে পান ওই পুলিশ সদস্য। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পর বাড়িটি নজরদারিতে রাখা হয় এবং গত রোববার অভিযান পরিচালনা করে এসব বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এদিকে- বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় রাতেই জগন্নাথপুর থানায় সাব ইন্সপেক্টর জিয়া উদ্দিন বাদী হয়ে আফজালুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এবং মামলা দায়েরের দিন রাতেই আফজালের পিতা আখলাকুর রহমান ও তার ভাই আমজাদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হওয়া পিতা ও পুত্র বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। এদিকে- অভিযানের পর থেকে পলাতক ছিল আফজাল হোসেন। তাকে ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। অবশেষে গত সোমবার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আফজালকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে- সুনামগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদক গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- আফজালকে পুলিশকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সে কোনো অপরাধ গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা- এসব বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। তবে- ২০২০ সালে আগ্নেয়াস্ত্রসহ আফজাল একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। সে কারাবরণ করেছে। অতীতে তার অপরাধ কর্মকাণ্ড রয়েছে। তিনি বলেন- বাড়ি থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আফজালকে। আজ তাকে আদালতে তোলা হবে। প্রয়োজন হলে পুলিশ তার রিমান্ড চাইবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১০৫ বার