হাওরের বন্যাকে মহাবিপর্যয় আখ্যা দিয়ে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি ১০টি দাবি তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট বেশ কয়েকজন নাগরিক। ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকবৃন্দ’ এর ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাওরবাসীকে রক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানানো হয়। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক    সংবাদ সম্মেলন করেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা হাওর এলাকায় এই বিপর্যয়ের পেছনে মানবসৃষ্ট কারণ কতটুকু সেটিও তদন্তের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরউল্লাহ চৌধুরী, কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
হাওরের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে ১০টি দাবি জানানো হয়। এগুলো হল: কেবল বোরো চাষের উপর নির্ভরশীল ২৪ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার নিশ্চয়তা দেয়া, সবার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু, সরকারি-বেসরকারি ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করা, পানিবাহিত রোগের প্রকোপ ঠেকাতে পর্যাপ্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রবীণ নাগরিকদের সুস্থ রাখার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
হাওরের সকল জলমহালের লিজ বাতিল করে উন্মুক্ত জলাশয়ে সকলের মাছ ধরার অধিকার দেয়ারও দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সেই সঙ্গে হাওরের পরিবেশ দূষণের প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি হলে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা, স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ, প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র সংরক্ষণসহ পরিবেশ অনুকূল উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয় এ সময়।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘খুঁজে বের করতে হবে এই দুর্যোগের কতখানি আসলে মানবসৃষ্ট দুর্যোগ, কতখানি দুর্নীতির কারণে ঘটেছে, কতখানি দায়িত্ব অবহেলার কারণে ঘটেছে, কতখানি এই মানুষগুলোর জীবনের প্রতি অবজ্ঞার কারণে ঘটেছে, কতখানি রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মধ্যে নীতির ভুলভ্রান্তির কারণে ঘটেছে। এগুলো তদন্ত করে দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’
সুলতানা কামাল বলেন, হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণে যে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় তার সম্পূর্ণ টাকা বাঁধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় না। সেখানে নানা দুর্নীতি-অনাচার চলে।’ তিনি বলেন, ‘পানি উন্নয়নের যে ইঞ্জিনিয়াররা থাকে তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া উচিৎ কেন এই বিপর্যয় ঘটেছে।’
জলমহাল ইজারা দেয়ার সমালোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘জলমাহল হল রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ কেন ইজারা দেয়া হচ্ছে? আর কয়েকদিন পরে তো নদী ও সাগরও ইজারা দেয়া হবে। এগুলো অসাংবিধানিক কর্মকান্ড। যেটা সরকার ইচ্ছা মত করতে পারে না।’

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn