সরকার, প্রশাসনের সামনে বিরাট এক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পুরো সরকারযন্ত্র তার বিরুদ্ধে। প্রশাসন সরকারের। সবকিছু ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে বার বার ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। এতে তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনিও বজ্রকঠিন, লৌহমানব হয়ে উঠছেন। তোষাখানা মামলা থেকে শুরু করে ম্যাজিস্ট্রেট জেবা চৌধুরীকে হুমকি দেয়ার মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে পুলিশ ও রেঞ্জার্সদের গলদঘর্ম হতে হয়েছে। তাতেও সফল হয়নি তারা। এ অবস্থায় আফগানিস্তান বিষয়ে জাতিসংঘের সাবেক বিশেষ রাষ্ট্রদূত জালমে খলিলজাদ সতর্ক করে বলেছেন, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হলে তাতে পাকিস্তান সংকট আরও গভীর হবে।
লাহোরে জামান পার্কে ইমরান খানের বাসভবনের বাইরে মোতায়েন করা হয় রেঞ্জার্স। তাদের সামনে লোহার দেয়ালের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এই প্রতিরোধ ভেঙে ইমরানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি তারা। পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। এরপরই ইমরান খানের নেতাকর্মী, সমর্থকরা উল্লাস করতে থাকেন। ইমরান খান এমনিতেই যতটা জনপ্রিয়, সরকার তাকে তারচেয়েও বেশি জনপ্রিয় করে তুলছে এসবের মাধ্যমে। মঙ্গলবার থেকে বুধবার দু’টি দিন জামান পার্কে ইমরানের বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ ও রেঞ্জার্স। বাড়ির ভেতরে তখন উৎফুল্ল ইমরান।
গতকাল পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাতিল আবেদন করা হয় ইসলামাবাদ হাইকোর্টে। আদালত তা শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। পরে এক রায়ে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ইমরানের বাসভবনে অভিযান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওদিকে বুধবার সকালে পাঞ্জাব পুলিশ ও রেঞ্জার্সের সহায়তায় ইসলামাবাদ পুলিশ তোষাখানা মামলায় ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে দ্বিতীয় দিনের মতো। কিন্তু তাদের সামনে পিটিআইকর্মীরা শক্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। জবাবে পুলিশ তাদের দিকে শুধু কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। এক ঘণ্টা ধরে এ ঘটনা চলার ফলে একে আন্তর্জাতিক মিডিয়া জনগণের সঙ্গে যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছে। পিটিআই অভিযোগ করে যে, জামান পার্কে ইমরানের বাসভবনকে কেন্দ্র করে চরম আক্রমণ হচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে পিটিআই একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে। তাতে বলা হয়, রেঞ্জার্স এবং পুলিশ প্রকাশ্যে গুলি চালাচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের এক পর্যায়ে পুলিশ, রেঞ্জার্সরা মল রোড পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তারপর সেখান থেকে চলে যায়। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে জামান পার্কে উল্লাসে ফেটে পড়েন পিটিআই কর্মী ও সমর্থকরা।
পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) ম্যাচ যাতে চলতে পারে এ জন্য সাময়িক সময়ের জন্য ইমরান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পিএসএল হলো পাকিস্তানে সবচেয়ে শীর্ষ খেলাধুলা বিষয়ক ইভেন্ট। জামান পার্ক থেকে সামান্য দূরে এই খেলার স্টেডিয়াম। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা পিএসএলের নিরাপত্তা ঝুঁকি নিতে পারি না। তাই আদালত যে আদেশ দিয়েছেন তা আমরা বাস্তবায়ন করবো।
ওদিকে টুইটারে পিটিআই কর্মকর্তাদের পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ইমরান খানকে। তিনি মুখে মাস্ক পরে জামান পার্কের ওই বাড়ি থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। এর আগে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন ইমরান খান। তিনি বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর লোকজন তার বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এই প্রহসন আদালত এবং এস্টাবলিস্টমেন্ট বন্ধ করতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ইমরান আরও বলেন, যে অবস্থা চলছে তাতে বাসার বাইরে থাকা ছেলেরা (সমর্থক) হয়তো আমার কথা শুনবে না। তাতে পরিস্থিতি খুব শিগগিরই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। যখন এই নৈরাজ্য এবং গোলা নিক্ষেপ করা হবে তাদের প্রতি, তারা আর আমার কথা শুনবে না। এখন তাদের ওপর আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই আশা আছে, বিচার বিভাগ এবং এস্টাবলিশমেন্টের ওপর। আমার দেশের এস্টাবলিশমেন্টের কাছে আমাদের দ্বিতীয় আশা। (তাদের কাছে প্রশ্ন) পাকিস্তানের প্রতি আপনাদের কী কোনো আগ্রহ আছে, নাকি নেই? যে প্রহসন চলছে, সেদিকে তাকান। আপনারা লন্ডন পরিকল্পনার জন্য কাজ করবেন না। দেশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সবার প্রতি আমার এখনকার আবেদন এখন দেশের কথা ভাবুন।
ইমরান খান আরও বলেন, আমি কি চেয়েছি? আমি যা বলেছি তা হলো- এই মামলা আদালতে স্থানান্তর করুন পর্যাপ্ত নিরাপত্তার সঙ্গে। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়া হলো। এটা অপ্রত্যাশিত যে, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং তার ওপর হামলা হয়েছে। আমি জেলে যেতে প্রস্তুত আছি। এ জন্য আমার ব্যাগ গোছানো আছে। কিন্তু আমার সমর্থকরা আটকে দিচ্ছে আমাকে। তারা জানেন আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পর থেকেই পিটিআই নেতারা নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতিত হচ্ছেন।
এর আগে সোমবার ইসলামাবাদের ডিস্ট্রিক্ট ও সেশন জজ কোর্ট ইমরান খানের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কারণ, তোষাখানা মামলায় তিনি অব্যাহতভাবে আদালতে উপস্থিতি এড়িয়ে চলছিলেন। ফলে আগামী ১৮ই মার্চের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলার জন্য পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়। এ অবস্থায় বুধবার সকালে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এবং পিটিআইয়ের আইনি টিম লাহোর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তারা পরোয়ানা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। আদালতের প্রধান বিচারপতি তাদেরকে বলে দেন, ইসলামাবাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং ইসলামাবাদ হাইকোর্টের উচিত এর শুনানি করা।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৮৩ বার