বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার আগাম সতর্কতা দিয়েছিলো আবহাওয়া অফিস। এই সংবাদে ব্যপক উদ্বিগ্ন জেলাসহ শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রায় সকল কৃষক। তাই, হাওরে থাকা কষ্টে ফলানো সোনার ফসল ঘরে তুলতে ব্যপক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন উপজেলার ছোট-বড় প্রায় ১৮টি হাওরের কয়েক হাজার বোরো চাষীরা। অন্যান্য সব কাজ ফেলে ‘মাথা বেঁধে’ মাঠে কাজ করছেন তারা। রোজা, তারপর ঈদ। এমন সময়ও ধান তুলতে ব্যস্ত ছিলেন কৃষক-কৃষাণীরা। দ্রুত ধান কাটা শেষ করতে প্রতিটি হাওরে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের ব্যবহার করছেন কৃষকরা। এতে যেমন দেখা দেয়নি শ্রমিক সংকট তেমনি দ্রুত শেষ হচ্ছে ধান কাটার কাজ। প্রতিটি হাওরে হাওরে খলা (ধান শুকানোর জন্য জায়গা) তৈরি করে ধান শুকাচ্ছেন কৃষকেরা। গো-খাদ্য হিসেবে সংগ্রহ করছেন খড়। লাগাতার বৃষ্টি পড়লে এ কাজগুলো করতে পারবেন না বিধায় হাওরে এমন কর্মোদ্যম তাদের।
কৃষকরা জানান, চলতি মাসের শেষের দিক থেকে সুনামগঞ্জ-সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতসহ কাল বৈশাখী হওয়া আশঙ্কা করেছে আবহাওয়া অফিস। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে জানানো হয়, হাওরের ধান যেনো দ্রুত কাটা হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিভিন্ন জায়গায় মাইকিংও করা হয়। এজন্য মূলত কৃষক মনে একটি শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই, যত দ্রুত সম্ভব উপজেলার কৃষকরা ধান কেটে শেষ করার চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার সবগুলো হাওরের প্রায় ৮৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) উপজেলার ডাবর সংলগ্ন বইষগাঁও হাওর, দেখার হাওরের আস্তমা অংশ, বীরগাঁওর পাখিমারা হাওরে গিয়ে দেখা যায়, ধান কাটায় ব্যপক ব্যস্ত সময় পাড় করছেন স্থানীয় কৃষকরা। হাওরের অধিকাংশ ধান কেটে শেষ করেছেন তারা। ইতোমধ্যে কাটা ধান মাড়াই করে রোদে শুকাতেও শুরু করেছেন অনেক কৃষক। ধান তুলায় এতো তারাহুরো কেনো জানতে চাইলে ডাবরের কৃষক শরীফ মিয়া জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছি দু’চারদিনের মধ্যে টানা বৃষ্টিপাত শুরু হবে। যদি বন্যা হয়ে যায় অথবা আর রোদ না উঠে তাহলে আমার সব ধান নষ্ট হবে। তাই রোদ থাকতে থাকতে ধান কেটে শুকিয়ে দ্রুত ঘরে তুলার চেষ্টা করছি। তার সাথে একমত পোষণ করেন পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন বাঘেরকোনা গ্রামের কৃষক তারিফ মিয়া ও পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের টাইলা গ্রামের কৃষক সাজিদুর রহমান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমদ জানান, ইতোমধ্যে আমাদের উপজেলার ৮৮ শতাংশ ধান কাটা শেষ। এ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে আশা করছি। ২৩ এপ্রিল থেকে লাগাতার বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা ছিলো বিধায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতনায় একটি মাইকিং করা হয়েছিলো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে শান্তিগঞ্জের উপজেলার দেখার হাওর, সাংহাই হাওর, জামখলা হাওর, খাই হাওর, কাউয়াজুরী হাওর, পিপড়াকান্দি হাওর, নাগডরাসহ ছোট বড় ১৮টি হাওরে বোরো ফসল চাষ করেছেন উপজেলার কয়েক হাজার প্রান্তিক কৃষক। এতে ২২ হাজার ১৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যারমধ্যে হাওরে হাইব্রিড ধান ৭ হাজার ৫ শত হেক্টর, উফশী ১০ হাজার ৭৬৪ হেক্টর, ব্রি ২৮ ১১শ হেক্টর ও স্থানীয় ১৪৫ হেক্টর এবং হাওরের বাইরে হাইব্রিড ১ হাজার ১ শত ও উফশী ৩ হাজার ১ শত হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। এ বছর ধান উৎপন্ন হবে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৮ মেট্রিকটন এবং চাল ৯৪ হাজার ৫৩২ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য হবে ৩৭৮ কোটি ১২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার উর্ধ্বে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। বোরো আবাদের মৌসুমের শুরু থেকেই মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত তদারকি, কৃষকদের পরামর্শ, প্রণোদনা বীজ- সার ও কৃষি যন্ত্রাংশ বিতরণের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থাকায় হাওরে এবার ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১৩১ বার