ডেস্ক নিউজ : টানা সাড়ে ৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। যেকোনো মুহুর্তে সংগঠনটির মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার কারণে বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। ৫টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্র্রলীগের অবস্থা চরম নাজুক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এমনকি মূল দল আওয়ামী লীগও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে বেশ চিন্তিত অবস্থায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের জন্য মাঝে মধ্যে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি সংগঠনটির নেতিবাচক কিছু কর্মকাণ্ডের মাশুল আওয়ামী লীগকেও গুণতে হয়েছে। কয়েকদিন আগে গণভবনে ছাত্রলীগ নেতাদের ডেকে বেশ কড়া ভাষায়ই সাবধান করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে তাতে করে বেশ চিন্তিত দলটির হাই কমান্ড। অনেকে ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজানোরও পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু আপাতত দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সংগঠনটিকে ছাত্রলীগের সাবেক একজন সভাপতির প্রভাবমুক্ত করতে খুব শিগগিরই   এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেয়ার বিষয় নিয়ে আওয়ামী লীগের ফোরামে আলোচনাও হয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ৫টি সুস্পষ্ট গ্রুপিংয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ নিজে একটি গ্রুপ চালাচ্ছেন। মাদারীপুর, শরিয়তপুর, ফরিদপুর এলকার নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি নিজের মতো চলছেন। তার গ্রুপের নেতাকর্মীরা সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কাউকে তোয়াক্কাও করছেন না।
একই অবস্থা সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন গ্রুপের। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি তার মত করে আলাদা গ্রুপ চালাচ্ছেন। অন্য কোনো গ্রুপের কাউকে তোয়াক্কা  করেন না। নিজেদের মতো করে চলছেন তারা। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেনও আলাদা গ্রুপ চালাচ্ছেন। অন্যদুইটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান কমিটির দুইজন সহ-সভাপতি।
সম্প্রতি রাজনৈতিক পোষ্টারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করেছে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। সাধারণত সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাদের রাজনৈতিক পোষ্টারে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবিসহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ দুই পদে থাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি ব্যবহার করে আসছে। তবে সৃষ্ট অতি গ্রুপিং সমস্যার কারণে জাকির গ্রুপের অনেক নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমানের ছবি ব্যবহার না করে শুধুমাত্র এস এম জাকির হোসেনের ছবি ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছেন।
পাল্টা-পাল্টিভাবে সোহাগ গ্রুপসহ অন্য গ্রুপের অনেক নেতাকর্মীরা শুধু মাত্র একজন নেতার ছবি ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি রাজনৈতিক পোষ্টারে উভয়ের ছবি ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
আর ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিত নেতারা ফুঁসে আছেন দীর্ঘ দিন ধরেই। ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটিতে বাদ পরা পদ প্রত্যাশীরাসহ বিভিন্ন কমিটিতে বাদ পড়া অথচ ছাত্রলীগের জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ত্যাগ স্বীকার করে আসা  পদ প্রত্যাশীরা ফুঁসে আছেন। মাসখানেক আগে ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে পদ বঞ্চিত ৫০ জনেরও বেশি পদ প্রত্যাশীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভও করেছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে সে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও পদবঞ্চীতদের দাবি পূরণ করতে পারেনি। পদ বঞ্চিতদের অনেকে বাধ্য হয়ে নিজেদের ক্ষোভ ও কষ্টের কথা জানিয়ে মুখ খুলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। পদ বঞ্চিতদের বেশ কয়েকজন চরম হতাশা ও ক্ষোভ  প্রকাশ করে বলেছেন, ‘বিদায়ী সোহাগ-নাজমুল কমিটি (২০১১-২০১৫) পদবঞ্চিতদের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করে ঢাবির হল কমিটি দেয়ার পরপরই তাদের ঢাবি ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়। আর এই কমিটি ঢাবির হল কমিটি ঘোষণার দীর্ঘ পাঁচ মাস পার হতে চললেও আমাদের অন্তর্ভূক্ত করে নেয়নি। আমারা এখন বেওয়ারীশ ছাত্রলীগ প্রেমী।’
কিছুদিন আগে পহেলা বৈশাখের আমন্ত্রণ দিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো কার্ড মধুর ক্যান্টিনে ফেলে রাখাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অনেক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল। শুধু গ্রুপিংয়ের কারণে তারা প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্রগুলো হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা। এছাড়া ছাত্রলীগ বর্তমান সময়ে যে কয়েকটি ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে সেখানে ছাত্র শিবিরের চিহ্নিত নেতারাও গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন। এ নিয়ে যেকোনো মুহুর্তে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে, ভয়াবহ সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে যে কোন সময়।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ  বলেন, ‘ছাত্রলীগের ভিতরে কোনো অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। ছবি ব্যবহার নিয়ে ছাত্রলীগে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যেকোন ধরণের প্রচার পত্রে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও তারুণ্যের অহংকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি ব্যবহার করা উচিত। এতে ব্যক্তিগত প্রচার কমে দলীয় প্রচার ও দলীয় সংহতি বৃদ্ধি পাবে। আর যারা দলে পদ নিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন বা বিভিন্নভাবে বাদ পড়েছেন তাদের স্থলে ত্যাগী পদ প্রত্যাশীদের কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।’
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিষয়ে যা ভাল মনে করবেন আমরা তা মেনে নেব। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল। তাই আমাদের বিষয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার দেয়া যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’ এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনের মন্তব্য জানতে বেশ কয়েক দফায় তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।  সংবাদের জন্য মন্তব্য প্রয়োজন উল্লেখ করে  ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও কোন সাড়া মেলেনি।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn